বহু বছর আগে বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতায় গোয়ালন্দ থেকে ‘অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে’ ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ তথা ‘রাশি রাশি ইলিশের শব’-এর কলকাতাযাত্রা বর্ণনা করেছিলেন। তারপর থেকে অনেক বছর সেই ‘রাশি রাশি’ ইলিশ ধরার গল্প থেমে ছিল। তার জায়গায় ছিল ইলিশের আকালের গল্প। কিন্তু গত ছয়-সাত বছরে ইলিশ আহরণে বলা যায় বিপ্লব ঘটে গেছে। দেশে ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে। গড় আকারও অনেক বেড়েছে। আগে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ কদাচিৎ মিলত। দামও মধ্যবিত্তের নাগালে ছিল না। এখন অনেক সহজলভ্য হয়েছে। শুধু আকার ও ওজন নয়, মোট উৎপাদনও কয়েক বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে।
এসবের মূল কারণ, সাগরে নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা। ওই সময় ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে উৎপাদন বেড়েছে। এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে গতকাল ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় জেলার পাঁচটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় সেখানে মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্যকারী ব্যক্তিরা কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ দুই মাস জাটকা আহরণে বিরত থাকা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৮ জন জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি ভিজিএফ চাল বরাদ্দ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
৮০ কেজি চাল দিয়ে একটি পরিবারের দুই মাসের সংসার খরচ মেটানো অসম্ভব। তারপরও দুই লক্ষাধিক জেলে পরিবারকে এটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কিন্তু এ চালও সময়মতো না পাওয়ার ঘটনা বিরল নয়। অতীতে এ ধরনের সহায়তার ক্ষেত্রে অনেক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। এ বছর তা যাতে না হয়, সে জন্য বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় দিন শেষে জেলেরাই যে লাভবান হবেন, সে বিষয়টিও তাঁদের উপলব্ধিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এ জন্য উদ্দীপনামূলক প্রচারাভিযান চালানো যেতে পারে।
জেলেরা নিজেরাই যদি নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরত থাকেন, তাহলে ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ অনিবার্যভাবেই উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে।