দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক

পোশাকের কারণে নরসিংদী রেলস্টেশনে হেনস্তা ও মারধরের শিকার হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী। মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা আরও দুই তরুণ। গত বুধবার ভোরে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে। কিছুদিন আগে ঢাকায় টিপ পরার কারণে এক নারী শিক্ষক হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে হেনস্তা ও মারধরের মুখে ওই তরুণ-তরুণীরা স্টেশনমাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাঁদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন।

বয়স্ক এক ব্যক্তিও তাঁর পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। এ সময় গালাগাল করতে করতে তাঁর পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনোরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী।

এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তাঁরাও দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান। ওই সময়ও তাঁদের লক্ষ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছিলেন ওই নারী।

পোশাকের কারণে হেনস্তা ও মারধরের শিকার হওয়ার মতো ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ। ঘটনার পরে চার দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি; যদিও গোয়েন্দা পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে। রেলওয়ে পুলিশের দাবি, ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণীরা লিখিত অভিযোগ করতে রাজি না হওয়ায় মামলা হয়নি। প্রশ্ন হলো, ভুক্তভোগীরা মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে কেন মামলা করল না?

সামাজিক সহিষ্ণুতার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কোথাও কোথাও এতে ফাটল আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটা সমাজে একই সঙ্গে বহু চিন্তা, বহুসংস্কৃতির মানুষ থাকবেন। সমাজে এ বৈচিত্র্যটাই স্বাভাবিক। ‘এটা কী পোশাক পরেছ’, কিংবা ‘টিপ পরেছ কেন,’ এমন কথা বলে কাউকে হেনস্তা ও মারধর করার অধিকার কারও নেই। এটা অপরের অধিকারের লঙ্ঘন। নাগরিকের পছন্দ ও স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।