সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার সমাজের দুস্থ ও অসহায় মানুষকে যে সহায়তা দিচ্ছে, তা মোটামুটি সব মহলে প্রশংসিত। যদিও তালিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রকৃত দুস্থ ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে সচ্ছল মানুষকে ভাতা দেওয়ার এন্তার অভিযোগ আছে। এই উপকারভোগীদের মধ্যে আছেন বৃদ্ধ, বিধবা ও দুস্থ নারী ও প্রতিবন্ধী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, সাতটি নতুনসহ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২৩টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলছে। বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু শনিবার প্রথম আলোয় ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার কারণে ছয় মাস ধরে উপকারভোগীদের ভাতা আটকে থাকার যে খবর বের হয়েছে, তা খুবই উদ্বেগজনক।
সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পারসন) পদ্ধতিতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেওয়ার নাম করে একশ্রেণির দালাল উপকারভোগীদের বরাদ্দের একাংশ হাতিয়ে নিত।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক উপায়ে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সফটওয়্যার ব্যবহার করে উপকারভোগীদের ডেটাবেইস তৈরি করা হচ্ছে। মুঠোফোনে অর্থ লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে দেশজুড়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। অ্যাকাউন্টধারীদের সব তথ্য এমআইএসে ডেটাবেইস আকারে থাকবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে প্রায় ৭৬ লাখ ভাতাভোগীকে ভাতা দেওয়া হবে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত উপকারভোগীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখের মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ৪৯৫টি উপজেলা এবং মহানগর ও জেলা শহরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ৮০টি আরবান কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (ইউসিডি) ইউনিটের মাধ্যমে ভাতার টাকা দেওয়া হয়। ডিজিটালাইজড অ্যাকাউন্ট হওয়ার কারণে ভাতাভোগীদের যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে নগদ ও বিকাশ এজেন্ট বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতার টাকা তুলতে পারবেন।
সরকারের এসব উদ্যোগ-আয়োজন নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। যেকোনো সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং প্রকৃত দুস্থ ও অসহায় মানুষ এর সুবিধা পাবে, এটাই প্রত্যাশিত। তবে সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে যে এই উপকারভোগীরা এতটাই দুস্থ ও অসহায় যে এক মাসের ভাতা না পেলে তাঁদের জীবন নির্বাহ করা কঠিন। এ অবস্থায় ছয় মাস ধরে ভাতা আটকে থাকলে তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে বাধ্য।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঈদুল ফিতরের আগে ডিজিটালাইজেশনের কাজ ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হলে ঈদের আগেই বকেয়াসহ উপকারভোগীরা তাঁদের পাওনা পেয়ে যাবেন। এখানে যদি কিংবা কিন্তুর কোনো অবকাশ নেই। ছয় মাস ধরে তাঁরা ডিজিটালাইজেশনের নামে দুস্থ ও অসহায় মানুষগুলোকে বঞ্চিত রেখেছেন। তা–ও করোনাকালে, যখন প্রান্তিক মানুষের আয় আরও কমে গেছে। ডিজিটালাইজেশন কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে ভাতা দেওয়া বন্ধ থাকতে পারে না।
আশা করি, অনতিবিলম্বে বকেয়াসহ উপকারভোগীদের সমুদয় পাওনা শোধ করা হবে।