২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক ও তাঁর সমর্থকদের ওপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী হামলার সময় ওই ভবনে রক্ষিত সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর ‘প্রত্যক্ষ মদদ ও হস্তক্ষেপেই’ ডাকসু ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে।
ডাকসু ভবনের বাইরে এবং ভেতরে মিলিয়ে মোট ৯টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। ক্যামেরার ফুটেজগুলো ধারণ করা হতো ডাকসুর সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদের কক্ষে, যেখানে একটি মনিটর ও একটি সিপিইউ ছিল। কিন্তু ডাকসু ভবনে নুরুল হকের ওপর হামলার পর সেই মনিটর এবং সিপিইউর কোনো হদিস না পাওয়া রহস্যজনক। এ রকম সুরক্ষিত কক্ষ থেকে কীভাবে ফুটেজ হারিয়ে গেল?
সাধারণ ছাত্র পরিষদ বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ এই ফুটেজ গায়েব করেছে। প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ফলে অভিযোগের তিরটি প্রধানত তাঁর দিকেই। প্রক্টরের হস্তক্ষেপে ডাকসু ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব হয়েছে, না অন্য কারও হস্তক্ষেপে হয়েছে, সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। যাঁরা সেদিন হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই ফুটেজ গায়েব করবেন না। ফুটেজটি তারাই গায়েব করেছে, যারা সেদিনের হামলার চিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছে। গায়েব হওয়া সিসিটিভিটি ছিল ডাকসুর জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে। হামলার ঘটনার পর কারা সেখানে গিয়েছিল, সেটি খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না।
সাধারণ ছাত্র পরিষদ নেতা দ্বিতীয় যে অভিযোগ করেছে সেটি আরও মারাত্মক। সন্ত্রাসীদের হাতে ভিপি নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীরা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রক্টরকে ১০ বার টেলিফোন করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনবার তিনি টেলিফোন ধরে টেলিফোনদাতাকে গালাগাল করেছেন। ডাকসুর সদস্য না হয়েও কেন রাশেদ খান সেখানে গিয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। ডাকসুর কেউ না হলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের যেকোনো স্থানে যাওয়ার এখতিয়ার তাঁর আছে। তারপরও যদি প্রক্টরের কাছে তাঁর কোনো আচরণ অন্যায় মনে হয়ে থাকে, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু ডাকসু ভবনে ডাকসুর ভিপিসহ অনেকে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন, এই খবর জানার পরও দ্রুত ঘটনাস্থলে না যাওয়ার কারণেই সন্ত্রাসীরা দ্বিতীয়বার হামলা করার সুযোগ পেয়েছে।
এদিকে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার মামলা করার পর তাঁর ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছেন ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা। ডাকসুর ভিপির ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে পুলিশ আটক করলেও বাকিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ অবস্থায় ভিপি নুরুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি যে উদ্দেশ্যমূলক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মাধ্যমে হামলাকারীরা নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আইন নিজের গতিতে চললে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে এবং অপরাধীরাও ধরা পড়বে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতার করা মামলায় প্রক্টরের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ডাকসু ভবনে হামলার খবর শোনার পরও প্রক্টরের দ্রুত ঘটনাস্থলে না যাওয়া এবং পাল্টা মামলায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা চরম পক্ষপাতেরই প্রমাণ।