ঠিকাদারিসহ সব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত হোক

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজে অনিয়ম-দুর্নীতিই নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ১৭ (৩) ধারা মোতাবেক ‘কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে তাহার পরিবারের কোনো সদস্যকে তাহার এখতিয়ারাধীন এলাকায় কোনো ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অনুমতি দিতে পারিবেন না।’

অথচ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ছেলে আদনান রফিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন ছয় বছর ধরে সিটি করপোরেশনের কাজ করছে। এর আগে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখার এক প্রকৌশলীর স্ত্রীর ঠিকাদারি ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছিল। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে বিধি ভঙ্গের অভিযোগে ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি একই শাখার আরেক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

প্রথম আলোর অনুসন্ধান ও সিটি করপোরেশনের নথিপত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী) রফিকুল ইসলাম মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশনকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এতে বলা হয়, মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং তারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীন ছয়টি উন্নয়নকাজ সন্তোষজনকভাবে শেষ করেছে। নথিপত্র অনুযায়ী, আদনান রফিকের বর্তমান বয়স ২৭ বছর। সে ক্ষেত্রে তিনি যখন ঠিকাদারি শুরু করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। বর্তমান ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের শান্তিধারা আবাসিক এলাকায়। একই ঠিকানায় প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বাসা। এ ছাড়া স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দনের সৈয়দপাড়া। রফিকুল ইসলামের ঠিকানাও এটি।

অবশ্য প্রধান প্রকৌশলী বলেছেন, তাঁর ছেলে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারি করেন না। তাহলে মিয়াজি কনস্ট্রাকশনের মালিক কে? সিটি করপোরেশন কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারের সদস্যরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন করলে তা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত ওই কর্মকর্তা বা কর্মচারী দিতে পারবেন না। অথচ আদনান রফিকের ক্ষেত্রে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম তাঁর প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন এবং বিলের টাকা ছাড়ের নথিতে সই করেছেন।

গত রোববার প্রথম আলোয় ‘বাবা প্রধান প্রকৌশলী ছেলে ঠিকাদার’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের জনগণের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অনেকে প্রথম আলোয় টেলিফোন করে অনিয়মের প্রতিকার চেয়েছেন। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। সিটি করপোরেশন তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে না। তদন্ত হতে হবে সিটি করপোরেশনের বাইরের কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। অতীতে বিধি ভঙ্গ করে যঁারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন, তঁাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র বদল হয়, কিন্তু ‘অভ্যাস’ বদলায় না। অনিয়ম ও দুর্নীতি আরও জেঁকে বসেছে। নগরবাসী ন্যূনতম সেবা থেকেও বঞ্চিত। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামকে যে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তা এখন অতীতের গল্প হয়ে আছে। দখল হয়ে গেছে শহরের ফুটপাতও। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ফুটপাত ভাড়া দিয়ে অভিনব ব্যবসা শুরু করেছিলেন নগরবাসীর আপত্তি উপেক্ষা করে। মানুষ আশা করেছিল, নতুন মেয়র এসে ফুটপাত দখলমুক্ত করবেন। কিন্তু তিনিও পূর্বসূরির পথে হাঁটছেন।