ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা

সম্পাদকীয়

কারখানা আছে। যন্ত্রপাতি আছে। কাঁচামালও দুষ্প্রাপ্য নয়। এরপরও দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সরকারি মালিকানাধীন ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ। কারণ ‘লোকবল নেই’। ক্রমাগত লোকসান হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে কারখানাটি প্রায় দুই দশক আগে সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখানে যে ১৩৪ জন শ্রমিক কাজ করতেন, তাঁদের কেউ মারা গেছেন, কেউ পেশা বদল করেছেন। যে কয়েক হাজার রেশমচাষি এ কারখানায় রেশম সরবরাহ করতেন, তাঁদের অনেকে এখনো গুটি উৎপাদন পেশায় টিকে আছেন।

আশাবহ খবর হলো, সরকারি উদ্যোগে না হলেও ব্যক্তি উদ্যোগে ফের কারখানাটি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহও দেখিয়েছেন। জেলা প্রশাসন, রেশম বোর্ড, আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি মতবিনিময় সভায় কারখানাটি বেসরকারিভাবে চালুর বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। সরকার কারখানাটি চালুর জন্য মেরামত করেছে। যন্ত্রপাতিও ঠিকঠাক করা হয়েছে। এখন কোনো ব্যবসায়ীকে মাসিক বা বার্ষিক ফির বিনিময়ে লিজ ভিত্তিতে কারখানাটি দেওয়া হবে।

বেসরকারিভাবে হলেও কারখানাটি চালু হলে রেশম খাতের জন্য এটি বড় সুখবর। এর কাঁচামাল তুঁতগাছ উৎপাদন ও এর পরিচর্যা খরচ অনেক কম বিধায় কারখানাটি চালু হলে ওই অঞ্চলে তুঁত চাষ বাড়বে এবং রেশম খাতে একটি চাঞ্চল্য তৈরি হবে। এতে রেশমশিল্পের সুদিন ফেরানো সম্ভব হতে পারে। দেশের রেশমি বস্ত্র যথেষ্ট উন্নত মানের এবং বিদেশে এর চাহিদাও অনেক। সে ক্ষেত্রে রেশমশিল্পে একটি নতুন স্পন্দন সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

তবে এ কারখানা সত্যিকার পেশাদার ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিতে না পারলে সেটি আবার সবাইকে হতাশ করতে পারে।

দেশের বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যায়, এ ধরনের সরকারি মালিকানাধীন কারখানা ব্যক্তিপর্যায়ের যাঁদের লিজ দেওয়া হয়, তাঁরা সাধারণত সরকারদলীয় ক্ষমতাধর লোক বলে পরিচিত থাকেন। উৎপাদনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে কারখানা দেখিয়ে ঋণ ও সরকারি প্রণোদনা-সুবিধা হস্তগত করাই তাঁদের মূল লক্ষ্য থাকে। সে ক্ষেত্রে ঠিক মানুষটির হাতে এ কারখানা পড়ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখা জরুরি।