নদী দখল ও দূষণ নিয়ে খবর নতুন কিছু নয়। প্রাত্যহিক জীবনের অংশের মতো নদী দখল ও দূষণের বিষয়টি মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি বলা যায় চালু হয়ে গেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এসব দূষণ ও দখলের পেছনে থাকেন বলে এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সাধারণত কথা বলেন না। তবে এই কাজ যদি কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান করে, তখন সেটি অধিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ঠিক সেই ধরনের একটি খবর: জামালপুরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের ময়লা-আবর্জনা ট্রাকে করে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলছেন। এই খবর পড়েই বোঝা যায়, একটি পৌরসভায় প্রতিদিন যে বর্জ্য জমা হয়, তার সবটাই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ব্রহ্মপুত্রের বুকে ঢালছেন। তার মানে টন টন বর্জ্য সেখানে ফেলা হচ্ছে আর মৃতপ্রায় ব্রহ্মপুত্রের মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে। পৌর মেয়র দাবি করেছেন, তিনি বিষয়টি জানতেন না। সেখানে আর বর্জ্য ফেলা হবে না বলে তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা কীভাবে পূরণ করা হবে, সে জবাব দেওয়ার কেউ নেই।
জামালপুর পৌর শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদটি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে ওঠা চর এখন শহরবাসীর বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর সেখানেই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের ময়লা-আবর্জনা ট্রাকে করে নিয়ে নদে ফেলেছেন। আবর্জনার দুর্গন্ধে এখন নদের পাড়ে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। লোকজন নদের তীরে আগের মতো বেড়াতে যেতে পারছে না। পরিবেশদূষণের পাশাপাশি আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে নদটি।
লক্ষণীয় বিষয় হলো শহরের পলাশগড় এলাকায় প্রায় আড়াই একর জমির মধ্যে বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত স্থান রয়েছে। কিন্তু পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেখানে না ফেলে ফৌজদারি ও পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় নদে বর্জ্য ফেলছেন।
এটি সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। জনসচেতনতার বিষয়। আইনকানুন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন। এত বড় একটি অনিয়ম হচ্ছে অথচ পৌর মেয়র তা জানতেন না, এটি দুঃখজনক। তবে তিনি যখন শেষ পর্যন্ত তা জানতে পেরেছেন, তখন এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু উপায় নির্ধারণে তাঁকেই সচেষ্ট হতে হবে। ইতিমধ্যে ময়লা–আবর্জনা ফেলে যতটুকু জায়গা ভরাট করা হয়েছে এবং পরিবেশদূষণ করা হয়েছে, তা দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা পৌরসভাকেই করতে হবে।
জামালপুর পৌরসভার মতো প্রতিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা দরকার, নাগরিকেরা পৌর কর দেন সেবা পাওয়ার জন্য, পৌর কর্মীদের ভুল কাজের কারণে ভুক্তভোগী হওয়ার জন্য নয়।