বিআইডব্লিউটিএর নৌপথ চলাচলের ছাড়পত্র নেওয়া ছাড়াই বরিশালের গৌরনদীতে দুটি খালের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করবে।
শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গৌরনদী উপজেলায় পালরদী নদীর শাখা গৌরনদী-ধামুরা খালের ওপর দুটি সেতু এবং গৌরনদী-রাজিহার খালের ওপর একটি সেতু বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেতু তিনটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। এলাকাবাসী ও নৌযানচালকদের আশঙ্কা, নির্মাণাধীন সেতুর উচ্চতা আগের তুলনায় কম হওয়ায় এ দুটি খালে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে।
যেসব নদীতে লঞ্চ কিংবা বড় জলযান চলাচল করে, সেসব নদীতে সেতু তৈরি করতে হলে বিআইডব্লিউটিএর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স বা নৌপথ চলাচলের ছাড়পত্র নিতে হয়। বিআইডব্লিউটিএ সেতুর সর্বনিম্ন উচ্চতা ঠিক করে দেয়, যেন সেখান দিয়ে জলযান নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। নৌচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, এমন ধরনের কোনো সেতু ও স্থাপনা নির্মাণ করার অনুমতি দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ছাড়পত্র ছাড়াই বিভিন্ন নদী ও খালের ওপর সেতু নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসায়িক বন্দর টরকী ও গৌরনদী বন্দরের সঙ্গে পালরদী নদী ও শাখা গৌরনদী-ধামুরা খালের মাধ্যমে নৌপথে যোগাযোগব্যবস্থা চালু রয়েছে। খালটি দিয়ে বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠি, মীরেরহাট, ধামুরা বন্দরের ব্যবসায়ীরা নৌযানে মালপত্র পরিবহন করেন। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই নৌপথে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় মালামাল পরিবহন করেন। কিন্তু ছাড়পত্র ছাড়া এভাবে সেতু নির্মাণের কারণে যদি এই পথে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে আর সহজে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে না। এটা এ অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর নিশ্চিতভাবেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
আমাদের প্রশ্ন, সওজ ও এলজিইডি কোন বিবেচনায় বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে নৌপথ চলাচলের ছাড়পত্র নেয়নি? এই ছাড়পত্র নেওয়াটা যে অতি আবশ্যক, সেটা কি সংস্থা দুটি জানে না?
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গৌরনদী বন্দরের ব্যবসায়ীরা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজের শুরুতেই বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছিলেন। তারপরও প্রকল্পের কাজ চলছে। উপজেলা প্রকৌশলীর উচিত ছিল ব্যবসায়ীদের অভিযোগকে আমলে নেওয়া। মূল সমস্যা হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা। কর্তব্যে অবহেলার জন্য যদি তারা শাস্তি পেত, তাহলে এভাবে অনিয়ম করতে পারত না। আমরা চাই, গৌরনদী-ধামুরা ও গৌরনদী-রাজিহার খালের ওপর তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই যেন এগুলোর সর্বনিম্ন উচ্চতা আবার পরীক্ষা করে দেখা হয়। দরকার হলে নতুন করে প্রকল্প নেওয়া হোক। সেতু নির্মাণের ফলে যদি খাল দুটিতে নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে লাভ কী?