মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে সেখানকার মৎস্য আড়তে এই ‘জালিয়াতি’ ধরা পড়েছে। সেখানে অভিযানে নৈশ মৎস্য আড়ত থেকে ১২২ কেজি জেল পুশ করা চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার ব্যবসায়ীকে ৭৩ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। অভিযানে পেটে পানি ঢুকিয়ে ওজন বাড়ানো বোয়াল মাছও জব্দ করা হয়েছে।
এক জরিপে দেখা গেছে, এক কেজি চিংড়িতে ২৫০ গ্রাম জেল পুশ করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে বিক্রেতা ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। চিংড়ি আনা হচ্ছে সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল থেকে। এসব চিংড়ির প্রায় সবই জেলযুক্ত। ভাতের মাড় ও আরও কয়েক প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের জেল তৈরি করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে ওই জেল চিংড়ির মাথায় পুশ করা হয়। সম্প্রতি ভৈরবেও এই জেল পাওয়া যাচ্ছে এবং কিছু ব্যবসায়ী মেঘনা নদী থেকে আহরিত চিংড়িতে জেল পুশ করছেন। পাঁচ কেজি ওজনের একটি বোয়ালে এক কেজি পানি পুশ করা হচ্ছে। বারবার একই অপরাধ ধরা পড়ছে। তবু অপরাধ থামছে না। সেই একই কাজ সাজাপ্রাপ্তরা আবার করছে। ফলে ‘কেন এমনটা হচ্ছে?’ সেই প্রশ্ন ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে।
ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মাছের দেহে যা পুশ করা হচ্ছে তাতে ক্রেতারা শুধু ওজনের দিক থেকে ঠকছেন, তা নয়। এসব জেল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে বড় ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে অর্থে এটি ‘স্লো-পয়জনিং’-এর পর্যায়ে পড়ে। অর্থাৎ এসব মাছ ব্যবসায়ী নীরব ঘাতকের ভূমিকা নিয়ে অগণিত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এই অপরাধের জন্য যে পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হচ্ছে, তাকে লঘুদণ্ডও বলা যায় না। ফলে মামুলি পরিমাণের জরিমানা দিয়ে রেহাই পাওয়া এসব অসৎ ব্যবসায়ী আবার একই অপরাধ করে যাচ্ছেন।
এ ধরনের অভিযানে যাঁদের ধরা হয় সাধারণত তাঁরা ভেজালের দায় স্বীকার করেন না। ভৈরব আড়তে যাঁদের জরিমানা করা হয়েছে, তাঁরা সবাই বলেছেন, চিংড়ি মাছের মাথায় জেল ঢোকানোর বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। তাঁরা খুলনা ও বাগেরহাট থেকে যে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসব মাছ কেনেন, তাঁরাই এই জেল পুশ করে থাকেন। এসব ব্যবসায়ী যথারীতি একে অন্যকে দোষারোপ করতে থাকেন। এই চক্রকে সমূলে উৎপাটনে সর্বাত্মক অভিযান চালানো দরকার।