লাইসেন্স বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো যান্ত্রিক বাহন সড়কে নামানো আইনত দণ্ডনীয় হলেও এটি অনেকেই মানেন না। গত জুলাই মাসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬০; যার মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২২ লাখ ৬ হাজার ১৫৫। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জনের।
এর অর্থ সড়কে চলাচলকারী বেশির ভাগ যানবাহনচালকের লাইসেন্স নেই। আর চালকের লাইসেন্স না থাকা যানবাহনের বড় অংশই মোটরসাইকেল। বাংলাদেশ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নিরাপদ সড়কের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে চালকদের প্রশিক্ষণ অন্যতম। কেউ মোটরসাইকেল কিনলেই সড়কে নামাতে পারেন না; প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ সনদ নিয়ে তাঁকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এরপর পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেই তিনি লাইসেন্স পাবেন।
যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ইউএনও মিজানুর রহমান লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলচালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে তাঁদের নানা সমস্যার কথা জানতে পারেন। চালকদের অভিযোগ, তাঁরা লাইসেন্স নিতে চান কিন্তু জেলা সদরে গিয়ে পরীক্ষা দিতে তাঁদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিষয়টি সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। কেশবপুর থেকে যশোর জেলা সদরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এরপর ইউএনও জেলা বিআরটিএর সঙ্গে আলোচনা করে উপজেলা সদরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। এই পরীক্ষা সামনে রেখে কিছুদিন মাইকিংও করা হয়। গত বুধবার কেশবপুরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ১৪৮ জন মোটরসাইকেলচালক অংশ নেন; যার মধ্যে ৬৪ জন উত্তীর্ণ হন। যাঁরা উত্তীর্ণ হতে পারেননি, তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষার সময়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক, ট্রাফিক পরিদর্শক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা সদরে পরীক্ষা দিতে পেরে মোটরসাইকেলচালকেরা খুশি। তাঁরা মনে করেন, এভাবে তৃণমূল পর্যায়ে পরীক্ষা হলে সব চালকই লাইসেন্স নিয়ে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো বাহন চালাতে উৎসাহিত হবেন। বিআরটিএ যশোর অফিসের সহকারী পরিচালক বলেছেন, জনগণের কথা চিন্তা করলে উদ্যোগটা ভালো। কিন্তু তাঁদের জনবলসংকট ও উপজেলায় অফিস না থাকার কারণে পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, সন্দেহ। তাঁর এই সন্দেহ অমূলক। উপজেলা সদরে বিআরটিএ অফিস না থাকলেও যে মোটরসাইকেলচালকদের পরীক্ষা নেওয়া যায়, কেশবপুরই তার প্রমাণ। আসলে একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা যে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি, সহকারী পরিচালকের কথায় সেটাই প্রমাণিত হলো। জনগণের সেবক হলে তাঁদের জনগণের কাছেই যেতে হবে। আমরা কেশবপুরের ইউএনওর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দেশের সব উপজেলায় এই দৃষ্টান্ত অনুসৃত হোক।