পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত জরিপে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা বেশ উদ্বেগজনক। এতে বলা হয়, গত এক বছরে ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে করোনার আগে দারিদ্র্যসীমার নিচে ২১ শতাংশ মানুষ আছে বলে সরকারি হিসাবেই বলা হয়েছিল। ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে ২১ শতাংশ গরিব হলে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৪৬ লাখ। এর সঙ্গে নতুন ২ কোটি ৪৫ লাখ যোগ হলো। সানেমের গবেষণায় দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার গত বছর যখন দীর্ঘমেয়াদি ছুটি ঘোষণা করে, তখন গণপরিবহন থেকে শুরু করে বেসরকারি খাতের অনেক কিছু বন্ধ ছিল। এর অভিঘাত এসে পড়ে শ্রমজীবী মানুষের ওপর। বিশেষ করে যাঁরা অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন বা ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরা জীবিকা হারান। তাঁদের বেশির ভাগই গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে অনেকে শহরে ফিরে এলেও আগের কাজ পাননি। তাঁরা কম আয়ের বিকল্প কাজ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
পিপিআরসি ও বিআইজিডির জরিপেও জানানো হয়, করোনায় শহরের দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেননা, শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশই কাজ করেন সেবা ও অনানুষ্ঠানিক খাতে। জরিপ প্রকাশকালে পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, যখন মানুষ গত বছরের করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে ও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, তখনই দ্বিতীয় ধাক্কা এল। একদিকে গরিব মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে। তাঁরা আগে খাবারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন, এখন তা করতে পারছেন না।
এ সংকট উত্তরণের উপায় সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। প্রথমত কাজ হারানো দরিদ্র মানুষগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে, যাতে তাঁরা দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, অর্থনীতির চাকা যত দ্রুত সম্ভব সচল করা, যাতে কাজ হারানো মানুষগুলো ফের কাজে যোগ দিতে পারেন। গত বছর সরকার ৫০ লাখ পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু সুষ্ঠু তালিকার অভাবে সবাই সেই সুবিধা পাননি। শেষ পর্যন্ত ৩৬ লাখ পরিবার এ সহায়তা পেয়েছে। এ বছরও সরকার ৩৬ লাখ পরিবারকে সমপরিমাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে আহ্বান থাকবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিন। সময়মতো মানুষগুলোর কাছে সহায়তা পৌঁছে দিন।
দ্বিতীয়ত, সরকার টিসিবির মাধ্যমে কম দামে যে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি ইত্যাদি বিক্রি করছে, তা যাতে প্রকৃত গরিব মানুষ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নত দেশে তো বটেই, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তুলনায়ও আমাদের দেশে গরিব মানুষের সহায়তার পরিমাণ নগণ্য। তা–ও যদি ঠিকমতো না পৌঁছায়, এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে।