১৯৯৮ সালে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর থেকে সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। স্থানীয় হোটেল ও মোটেল ব্যবসায়ীদের মতে, ২০১৮ সালে কুয়াকাটায় ৮ লাখের কাছাকাছি পর্যটক গিয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও চলতি মৌসুমে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত বছর পর্যটক সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শীত কমে গেলে পর্যটকের সংখ্যা আবার বাড়বে।
পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে কুয়াকাটায় ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটেছে। অনেক আবাসিক হোটেল ও মোটেল তৈরি হচ্ছে। পায়রা বন্দর পুরোপুরি চালু হলে কুয়াকাটা সত্যি সত্যি দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
কিন্তু একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন, তার অনেক কিছুই কুয়াকাটায় নেই। এর পাশাপাশি গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে একটি প্রভাবশালী মহল শতাধিক স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছে। এর মধ্যে পাকা ও আধা পাকা স্থাপনাও রয়েছে। অথচ ২০১১ সালে হাইকোর্টের রায়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সব স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা ভেঙেও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আবার সেখানে স্থাপনা তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে হোটেল সানরাইজের মালিক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অযৌক্তিক ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর মালিকানাধীন জমিতেই এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সম্ভবত জানা নেই যে জমির মালিক হলেই তিনি হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে সেখানে স্থাপনা তৈরি করতে পারেন না। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ব্যক্তিগত জমি হোক আর খাসজমি হোক, কোনো স্থাপনা তৈরি করা যাবে না।
কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেছেন, ১০০ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু চিহ্নিত করলেই তো দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করার পাশাপাশি সজাগ থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্থাপনা তৈরি করতে না পারে। সৈকতে তৈরি অবৈধ স্থাপনাগুলো দোকান ও রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সেসব থেকে যত্রতত্র ময়লা–আবর্জনা সৈকতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এটি শুধু পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, পর্যটকদের বিরক্তিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবিলম্ব এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলা ও দখলদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে এ রকম একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।