উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ অনুপাত ধরা হয় ১:৩০। এর অর্থ ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। জনবহুল ও সমস্যাকীর্ণ বাংলাদেশে হয়তো সেই অনুপাত আশা করা যায় না। কিন্তু উপযুক্ত পাঠদানের জন্য ৬০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে অন্তত একজন শিক্ষক থাকা জরুরি।
কিন্তু কুমিল্লা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদকের পাঠানো খবরে জানা যায়, কুমিল্লা সরকারি কলেজে ৪ হাজার ২৬০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য আছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। এর অর্থ হলো ১৪২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। এভাবে কোনো দেশে উচ্চশিক্ষা চলতে না পারলেও আমাদের অতি সফল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটাই করে দেখাচ্ছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা কলেজটি সরকারি করা হয় ১৯৮৫ সালে।
তবে এই সমস্যা শুধু কুমিল্লা সরকারি কলেজের নয়। এর আগে প্রথম আলোতেই রিপোর্ট হয়েছিল কুমিল্লার বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ নিয়ে; যেখানে সমাজকর্ম বিভাগের ৫৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। বেসরকারি কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা কমিটির। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তারা শিক্ষক নিয়োগ করতে পারে। আবার কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মকানুনের ব্যত্যয় ঘটালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে। কোনো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাইলেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে বা পদ সৃষ্টি করতে পারে না। কাজটি করতে হবে মন্ত্রণালয়কেই। কিন্তু সরকারি করার ৩৫ বছর পরও কেন তারা কুমিল্লা সরকারি কলেজের জনবলকাঠামো পুনর্বিন্যাস করল না? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজে বাড়তি উৎসাহ লক্ষ করা যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়েই তারা উদাসীন। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় বছর শেষে শিক্ষার্থীরা সনদ পেলেও প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য প্রায় প্রতিদিনই নসিহত করে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ না করে সেটি কীভাবে সম্ভব? পৃথিবীতে এমন কোনো পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, যেখানে উপযুক্ত শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা যায়। আর যদি শিক্ষক ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালু থাকবে, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই বা কেন?
অবিলম্বে কুমিল্লা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অবিমৃশ্যতা কাম্য নয়।