কোনো এলাকায় মালিকবিহীন পথবাসী কুকুরের সংখ্যা বাড়লে তা একপর্যায়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব কুকুর কাউকে কামড় দিলে জলাতঙ্কের আতঙ্ক জনমনকে তীব্রভাবে বিচলিত করে। এমন পরিস্থিতির উদয় হলে একসময় ‘ঝাড়ে–বংশে নিধন’–এর পথ ধরা হতো। আদিম নৃশংসতায় পিটিয়ে কুকুর নিধনের জন্য সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দও রাখত। ২০১২ সালে উচ্চ আদালত নির্বিচার কুকুর নিধনকে অমানবিক সাব্যস্ত করেন এবং তা বন্ধের নির্দেশ দেন। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে কুকুরকে বন্ধ্যা করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই চেষ্টা সর্বত্র সফল হচ্ছে—এমন লক্ষণ মিলছে না। সেই চেষ্টার আন্তরিকতাও খুব একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে দেশের নানা স্থানে কুকুরেরা নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।
প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর শহরে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যাওয়ায় এলাকাবাসী বিপাকে পড়েছে। বিভিন্ন অলিগলিতে কুকুরের দলগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিশু–কিশোর, পথচারীসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে প্রধান প্রধান সড়কে যূথবদ্ধ সারমেয় শ্রেণির সদম্ভ উপস্থিতির কারণে পথচারীদের কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে চলন্ত যানবাহনের সামনে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দৃশ্যত কিছুই করছে না। তাদের বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রমও নজরে আসছে না।
সখীপুর উদাহরণ মাত্র। মূলত সারা দেশেই এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে কুকুরের প্রজনন মৌসুম চলছে। এ সময়ে প্রকৃতিগত কারণেই কুকুর তুলনামূলক বেশি আক্রমণাত্মক হয়। এ সময়টাতেই মানুষ আক্রান্ত হয় বেশি। কুকুরের কামড়জনিত জলাতঙ্ক রোগ এ সময় বেশি হয়। ফলে অন্য সময়ে যেমন তেমন হলেও, এ সময়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশি সক্রিয় হওয়া দরকার।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের হাসপাতালে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন বরাদ্দ নেই। রোগী এলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। দেশের অন্যান্য উপজেলার সব না হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ভ্যাকসিনের অভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভ্যাকসিনের অভাব আছে, দ্রুত সেখানে তা পৌঁছানো দরকার।
মোটাদাগে বোঝা যায়, এখন অবধি বেওয়ারিশ কুকুরের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার প্রচলিত উপায়গুলো যথেষ্ট সংবেদনশীল নয়। অবৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্বীজকরণ অথবা নির্মম হত্যা—কোনোটিই ‘সভ্য’ সমাধান নয়। এ কারণে বিকল্প পথ খোঁজার দায়িত্ব থেকেই যায়। কিন্তু বিকল্প পথ হাতের কাছে নেই বলে অনেক ক্ষেত্রে নৃশংসভাবে কুকুর নিধন করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ কারণে কুকুর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাটি কী হতে পারে, তা জরুরি ভিত্তিতে ভাবা দরকার।