করোনার ছুটি ও ভবনের পানিদূষণ

বদ্ধ স্থানে পানি আবদ্ধ থাকলে সেখানে জীবাণুর জন্ম অতি স্বাভাবিক। ভবনের পাইপলাইন ও ট্যাংকে মাসাধিক কাল পানিবন্দীর ফল হেতু ব্যাকটেরিয়ার প্রজননচক্র বহু গুণে সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা পানিবাহিত মৌসুমি বালাই, এমনকি মারির জন্ম দিতে পারে। তখন প্রকৃত অর্থেই পানির অপর নাম মরণ হয়ে ওঠে। অতি উদ্বেগ ও আশঙ্কার বিষয়, করোনাভাইরাসের সুবাদে ঘোষিত ছুটির ফলে সেই আশঙ্কা জোরদার হয়েছে।

 করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে স্কুল-কলেজ, কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ আছে। সর্বশেষ এই বন্ধের মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতের ছোট-বড় ভবন দেড় মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এসব ভবন বা স্থাপনায় নানা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ নানা ধরনের জীবাণু জন্ম নেবে। বিশেষ করে এসব স্থাপনা বা ভবনের ট্যাংক ও সরবরাহ লাইনে জীবাণু জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

কোভিড-১৯-এর কারণে লকডাউনের সময় বিভিন্ন স্থাপনায় জমে থাকা পানি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর কী ধরনের হুমকি তৈরি করেছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচার রিসার্চ জার্নাল–এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, লকডাউনের কারণে বিভিন্ন স্থাপনায় দীর্ঘদিন জমে থাকা পানিতে ক্ষতিকারক নানা ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিয়েছে। এর মধ্যে বড় হুমকি লেজিওনেলা নামের ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমিত হয়। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন স্থাপনায় জমে থাকা পানির ব্যাপারে বন্ধ প্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সতর্ক হওয়া জরুরি।

 বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমা পানি থাকলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মাবেই। ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হলো পানি। ওই বদ্ধ পানি ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া আমাদের খাবার চেইনের ভেতর ঢুকে যাবে। এ কারণে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় জমে থাকা পানি যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

অফিস–আদালত খোলার আগেই এসব পানি সরিয়ে ফেলা দরকার। এ ছাড়া বৃষ্টিবাদলায় ভবনের ছাদ কিংবা আশপাশে যে পানি জমেছে, তা–ও সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, এই পানিই ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশার জন্মস্থল। এই অবাঞ্ছিত সলিল অপসারণেরকাজ সম্পাদনের দায় এককভাবে সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে চাপানো ঠিক হবে না। এ বিষয়ে প্রতিটি ভবন কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে।