২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

করোনাকালের বেকার শ্রমিক

শ্রমিকসহ বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের তথ্যভান্ডার থাকা যে কত জরুরি, তা আবারও প্রমাণিত হলো। চলতি বছর মে মাসে যখন করোনার কারণে দেশের শিল্প খাত স্থবির হয়ে পড়ে, তখন শ্রমিকদের আয়রোজগারও বন্ধ হয়েছিল। এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জার্মান সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তারা বেকার শ্রমিকদের সহায়তা দিতে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার সমান ১১ কোটি ৩০ লাখ ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

শ্রমিকদের তালিকা তৈরির প্রাথমিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কারখানার। পরে সেটি যাচাই-বাছাই করার কথা সংশ্লিষ্ট খাতের মালিকদের সমিতির। রপ্তানিমুখী শিল্পের চারটি সমিতি হলো বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)।

কিন্তু ছয় মাস পার হওয়ার পর ৭ অক্টোবর নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কেবল রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকেরাই এ সুবিধা পাবেন। প্রতি মাসে ৩ হাজার করে মোট ৯ হাজার। যেসব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন, তাঁদের জন্য এ সহায়তা যথেষ্ট না হলেও সাময়িক স্বস্তি দিতে পারত। কিন্তু তালিকা তৈরি করা ছাড়া তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অর্থ বিভাগের দাবি, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এটি করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলো বলেছে, কমিটিতে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। একজন শ্রমিকনেতা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি পণ্য রপ্তানি করে না, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করে, তাদের শ্রমিকেরাও এ সহায়তা পাওয়ার দাবিদার।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কারখানামালিক ও সমিতিগুলো শ্রমিকদের তালিকা তৈরিতে খুব আগ্রহী নয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, নীতিমালা মেনে তালিকা করা সম্ভব নয়। সমিতিগুলোর সেই সামর্থ্যও নেই। কেননা, সমিতির বাইরেও অনেক শিল্পকারখানা আছে। তালিকা তৈরি না হওয়ার কারণে অর্থ ফেরত গেলে সেটি হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ২০১৪ সালে রানা প্লাজা ধসের পরও বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শ্রমিকদের সহায়তা করেছিল। সেবার বিজিএমইএর উদ্যোগে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। বিজিএমইএর ডেটাবেইস আছে। অন্যান্য সমিতিরও উচিত নিজস্ব তথ্যভান্ডার তৈরি করা। তালিকা তৈরির কাজটি কি এতই কঠিন? বিশেষজ্ঞরা বরাবর প্রত্যেক নাগরিকের ডেটাবেইস বা তথ্যভান্ডার করার ওপর জোর দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কিংবা সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পুরোপুরি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর নির্ভর করতে হবে না। তাঁদের অন্যায় কাজকে সহজে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।

সরকারের কাছে তথ্যভান্ডার না থাকায় করোনাকালে সরকারের নেওয়া বিশেষ সহায়তা কর্মসূচিও হোঁচট খেয়েছে। ৫০ লাখ পরিবারকে এ সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। দুই দফা তালিকা তৈরির পরও ১৫ লাখ পরিবার বঞ্চিত হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর নির্ভর না করে সরকারের উচিত অবিলম্বে একটি জাতীয়ভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা, যাতে প্রত্যেক নাগরিকের আয়-ব্যয়সহ সব তথ্য থাকবে। যেহেতু প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, সেহেতু এটি করা কঠিন কাজ নয়।

অবিলম্বে বেকার শ্রমিকদের তালিকা করে ইইউ ও জার্মান সরকারের দেওয়া অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হোক। তালিকার অভাবে এ অর্থ ফেরত গেলে তাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। জাতি হিসেবেও আমাদের অক্ষমতা ও অদক্ষতা প্রকাশ পাবে।