পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নিয়োগ পেলে তাঁর প্রথম ও প্রধান কাজ হয়ে পড়ে কিছু লোক নিয়োগ, প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক। অতিরিক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের কারণে কোনো কোনো উপাচার্যকে অপমানজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেওয়ার উদাহরণও আছে। তারপরও উপাচার্যদের ‘নিয়োগব্যাধি’ সমানে চলছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ২ হাজার ৮২৩ জন। তাঁদের মধ্যে কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৭০ জন। অর্থাৎ মোট লোকবলের অর্ধেকের বেশি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ইফতেখার চৌধুরী সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ করে চলেছেন। তা–ও এমন সময়ে, যখন তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার বাকি মাত্র এক মাস। আগামী জুন মাসে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারুন আর না পারুন, কর্মচারী নিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত মার্চ ও এপ্রিলে আরও ২৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদের প্রথম তিন বছরে অস্থায়ী ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে ৯৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে উপাচার্য যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর দাবি, সব প্রক্রিয়া মেনে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেছেন, নিয়োগ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। যে নিয়োগ সম্পর্কে সহ–উপাচার্য জানেন না, সেটি কীভাবে আইনসম্মত হয়? সহ-উপাচার্য কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাইরের কেউ? প্রয়োজন আছে বলে নতুন করে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে উপাচার্য আত্মপক্ষ সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলেছেন, নতুন করে কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজন নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সত্যি সত্যি কর্মচারী নিয়োগ করা জরুরি হয়ে থাকে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে করতে হবে। অস্থায়ী ভিত্তিতে বা উপাচার্যের খেয়ালখুশিমতো হতে পারে না। অস্থায়ী নিয়োগে সব সময়ই একটা অস্বচ্ছতা থাকে। যোগ্যতা যাচাইয়েরও সুযোগ নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অস্থায়ী ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের মেয়াদ শেষে বাদ দেওয়ার নজির নেই। পর্যায়ক্রমে তাঁদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এ কারণেই অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিষেধাজ্ঞা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলে কেউ সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করতে পারেন না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে কর্মচারী পদে যে পাইকারি নিয়োগ দিয়েছেন, তা বাতিল করা হোক।