২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইজারা দেওয়া কতটা যৌক্তিক

সম্পাদকীয়

দেশের প্রাকৃতিক নিদর্শন ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো একে একে চলে যাচ্ছে ইজারাদারদের হাতে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যবৃদ্ধির নামে এমনটি করা হলেও আদতে সেগুলো হয়ে উঠছে ব্যবসায়িক কেন্দ্র। সেই সঙ্গে মানুষের ঘোরাঘুরি ও নিশ্বাস ফেলার জায়গাও সংকুচিত হয়ে আসছে। এ নিয়ে জাফলংয়ে পর্যটককে মারধরের শিকার হতেও আমরা দেখলাম। এ ছাড়া ইজারাদারেরা ধারণক্ষমতার কারণে বেশি লোক ঢুকিয়ে প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশও ঘটিয়ে চলেছেন।

যেমনটি আমরা মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ার ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। এবার চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকেও বেসরকারি খাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য দুই মাস আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দরপত্রও আহ্বান করেছে। এখনো দরপত্র প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শেষ হয়নি। সেখানকার নাগরিক সমাজ, পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করলেও এর কর্ণপাত করছে না সিডিএ।

গত বুধবার দরপত্র কার্যক্রম বন্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা। পাশাপাশি বিবৃতি দিয়েছে সিপিবি। তারা পতেঙ্গা সৈকত ‘রক্ষায়’ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত জনগণের সম্পত্তি। এমন প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থান বাণিজ্যিকীকরণের তৎপরতা, বিশেষ এলাকা করে টিকিট বসানো ও সামর্থ্যবানদের প্রবেশ করতে দেওয়ার অধিকার সিডিএ কোথায় পেল? সৈকতের জমির মালিকানাও সিডিএর নয়। এর মালিকানা জনগণের, রাষ্ট্রের। এই সবকিছুই সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্র কোনো কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিলে তা হবে একেবারে বেআইনি।

এ ব্যাপারে সিডিএর বক্তব্য, সৈকতের দেড় কিলোমিটার অংশবিশেষ জোন হিসেবে পরিচালনা করার জন্য একজন অপারেটরকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেখানে রাইডসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে বাকি পাঁচ কিলোমিটার অংশ রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। সেই অংশ একেবারে উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু সমুদ্রসৈকতে স্থাপনা নির্মাণ ও রাইড বসানো মানে এর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই নষ্ট করা। এর আগে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে ফয়’স লেকের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গেছে।

২০১৯ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রাকৃতিক সম্পদ, উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, ঝিল, সমুদ্রসৈকত, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন, বাতাস—সবকিছু হলো পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি, এগুলোর কোনো একটির অধিকার থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থী। আমরা চাই না, সিডিএ কোনো আইন লঙ্ঘন করুক। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া থেকে তারা পিছিয়ে আসবে, এমনটিই আমরা আশা করছি।