বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কুন্দগ্রাম এলাকায় অবৈধ সিসা কারখানায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা সংগ্রহের খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। রাত গভীর হলেই এই কারখানায় ব্যাটারি পোড়ানো শুরু হয়। এতে প্রতিদিন কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়, যা সেখানকার মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া জনৈক আলতাফ আলী এবং স্থানীয় আরও কয়েক ব্যক্তি দুই মাস আগে কুন্দগ্রাম এলাকায় চাঁপাপুর-কুন্দগ্রাম রাস্তার পাশে এই সিসা সংগ্রহের কারখানা স্থাপন করেছেন। সিসা সংগ্রহের জন্য কারখানায় গভীর রাতে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারি পোড়ার প্রকট গন্ধে আশপাশ এলাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আশপাশের জমির ফসল ও গাছপালা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শিশুসহ বয়স্ক লোকজন শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। একটি অবৈধ কারখানার জন্য মানুষের এই ভোগান্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই কারখানায় পরিত্যক্ত ব্যাটারি কয়লার আগুনে পোড়ানো হয় এবং সেখান থেকে গলিত সিসা আলাদা করে সংগ্রহ করা হয়। এসব ব্যাটারিতে সিসা ছাড়া আরও থাকে প্লাস্টিক, দস্তা ইত্যাদি। সেসব পোড়ানোর ফলে ডাই-অক্সিন, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা দ্রুত বাতাসের সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরিবেশ দূষিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিসা দূষণের সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুদের ওপর। সিসার সংস্পর্শে আসা শিশুরা গুরুতর ও স্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারে। এটা বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রাপ্তবয়স্করাও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হন। সিসার সংস্পর্শে এলে কিডনি নষ্ট এবং উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত, মৃত শিশুর জন্ম দেওয়া ও স্বাভাবিক সময়ের আগে শিশুর জন্ম দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কী করে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কারখানা গড়ে তোলা হলো? রাষ্ট্রের আইনকানুনকে গ্রাহ্য করার সাহস তাঁরা কোথা থেকে পেলেন? তাঁদের এই সাহসের উৎস কোথায়? স্থানীয় প্রশাসন তাহলে কী করছে? এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের অসুবিধার কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই কারখানার কার্যক্রম চললেও এটি বন্ধে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। প্রশাসনের এ ধরনের ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে এ ধারণা হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে প্রশাসনের সঙ্গে কারখানার মালিকদের ভাগ–বাঁটোয়ারার কোনো সম্পর্ক আছে।
আদমদীঘি উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আমাদের আবেদন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সিসা সংগ্রহের এই অবৈধ কারখানা দ্রুত উচ্ছেদ করুন।