‘রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে’ লোকালয়ে যাচ্ছে ‘রাশি রাশি ইলিশের শব’। এভাবেই ইলিশের বাজারযাত্রার ছবি এঁকেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। সেই বাজারের ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। গত তিন বছরে দেশে বড় ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে। আগে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বাজারে খুব কমই দেখা যেত। দামও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ছিল না। এ বছর বাজারে প্রচুর পরিমাণে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে। ইলিশের গড় ওজন গত তিন বছরে ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে। শুধু আকার ও ওজন নয়, মোট উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে।
এসবের মূল কারণ, সাগরে নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা। ওই সময় ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা বন্ধ এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশের ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।
দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা (১০ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ) ধরা, পরিবহন এবং বিক্রি নিষিদ্ধ থাকে। এ মৌসুমেও একইভাবে গত নভেম্বর থেকে চলছে নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পাঁচটি অভয়াশ্রমে নতুন করে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। এতে কোনো সন্দেহ নেই, এই সময়টাতে মাছ ধরতে না পারায় জেলেদের যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করতে হবে। কিন্তু এটিও সত্য, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে না পারলে পরিমাণে বেশি এবং আকারে বড় ইলিশ ধরা পড়বে না।
যেহেতু প্রয়োজন আইন মানতে চায় না, সেহেতু এই সময়টাতে জেলেদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার। সরকার উপকূলীয় ২০ জেলার ২,৮০,৯৬৩টি জেলে–পরিবারকে সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা করেছে। অতীতে এ ধরনের সহায়তার ক্ষেত্রে অনেক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। এ বছর তা যাতে না হয়, সে জন্য এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় যে দিন শেষে জেলেরাই লাভবান হবেন, সে বিষয়টিও তাঁদের উপলব্ধিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এ জন্য উদ্দীপনামূলক প্রচারাভিযান চালানো যেতে পারে।
জেলেরা নিজেরাই যখন নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরত থাকবেন, তখন ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ অনিবার্যভাবেই উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে।