অবৈধ ইটভাটা

সম্পাদকীয়

গাজীপুর সদর উপজেলার পাইনশাইল ও ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাহায্যে ১১টি অবৈধ ইটভাটার আগুন নিভিয়ে যন্ত্র ব্যবহার করে ভেঙে দিয়েছে এবং প্রতিটি ইটভাটার মালিককে ছয় লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। এটি একটি সুখবর। কারণ, পরিবেশ অধিদপ্তর ঠিক কাজ করেছে; যা এই দেশে সচরাচর করা হয় না। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই অবৈধ ইটভাটাগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পন্থায় ইট উৎপাদন করা হচ্ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মিত নজরদারি ও সক্রিয়তা থাকলে আরও আগেই এগুলো অবৈধ হিসেবে শনাক্ত হতো এবং ভাঙা পড়ত। তবে কখনো না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো। সেই অর্থে এটা একটা সুখবরই বটে।

ঢাকার কাছের জেলা গাজীপুর একসময় ইটভাটায় সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। কী করে তা সম্ভব হয়েছিল, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে এই প্রশ্ন রাখা যায়। প্রায় ২৫০টি ইটভাটায় কয়লা পুড়িয়ে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া উদ্‌গিরণ করে দিনরাত চলত ইট উৎপাদনের কাজ। রাজধানী ঢাকার বাতাসের মান যে মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর মাত্রায় খারাপ, তার একটা বড় কারণ গাজীপুরসহ ঢাকার চারপাশের কয়েক হাজার বৈধ-অবৈধ ইটভাটা। গত বছর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় ১৩৯টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। এখনো জেলাজুড়ে আছে ১৭০টি। সেগুলোর মধ্যে ৬০টি অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ পরিবেশবিষয়ক ছাড়পত্র ছাড়াই সেগুলো চালানো হচ্ছে। গত মাসে প্রথম দফা অভিযান চালিয়ে ৮টি আর গত বৃহস্পতিবার ১১টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার পরও থেকে গেল, ৪১টি ইটভাটা দিনরাত নিম্নমানের কয়লা পুড়িয়ে মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটিয়ে চলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে ভেঙে দেওয়া হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে নানা পন্থায়, নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। অধিকাংশই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া আমাদের চলবে না বটে, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি এড়িয়ে, অন্ততপক্ষে ক্ষতির মাত্রা সীমাবদ্ধ রেখে তা করতে হবে। সেই কারণেই সব ধরনের শিল্প স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক ছাড়পত্র গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু দেশজুড়ে অজস্র শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুদূষণসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি অবিরাম ঘটে চলেছে।

সে জন্য সারা দেশের অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করতে অভিযান চালানো প্রয়োজন আর বৈধ ইটভাটার সংখ্যাও কমিয়ে আনা উচিত। সেগুলো যেন পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালিত হয়, তা–ও নিশ্চিত করা জরুরি।