দেশের হাটবাজার থেকে সরকার যে রাজস্ব পায়, তার একটি অংশ উন্নয়নকাজে ব্যয় করার কথা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আছে, যাতে হাটবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। কিন্তু রংপুরের তারাগঞ্জ ও ইকরখালী হাটের দুরবস্থা দেখে মনে হয় না এর প্রতি কারও নজর আছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর তারাগঞ্জ প্রতিনিধির প্রতিবেদনে তারাগঞ্জ উপজেলাধীন দুটি বাজারের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা কমবেশি সব হাটবাজারের ক্ষেত্রেই সত্য। ছরিতে দেখা যায়, তারাগঞ্জ হাটে মাঠের পাশে বিরাট ডাস্টবিন উপচে ময়লা–আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। হাটের পচা-গলা ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ডাস্টবিন উপচে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনায় পুরোনো নালাটি ভরে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে হাটে হাঁটুপানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।
অথচ যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তারাগঞ্জ উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান হাট, যেখানে গরু, ছাগল ও কাঁচামাল বেচাকেনা হয়। চলতি বছর হাটটি সরকারি ইজারা দেওয়া হয়েছে ২ কোটি প্রায় ৪০ লাখ টাকায়। হাটের উন্নয়নে এর সিকি ভাগ ব্যয় করলেও এ দুরবস্থা থাকার কথা নয়।
উপজেলার ইকরচালী হাটের অবস্থাও তথৈবচ। যেকোনো হাটে নির্ধারিত স্থানে গরু-ছাগল জবাই করা এবং দ্রুত এর রক্ত-বর্জ্য ফেলার কথা। কিন্তু তারাগঞ্জ ও ইকরচালীতে যত্রতত্র কাজটি করা হচ্ছে। ফলে পুরো এলাকা ময়লা–আরবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ৯ বছর ধরে ইকরচালী বাজারে কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। বাজারের পানিনিষ্কাশনের নালাটি ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে হাটের ভেতর হাঁটুসমান কাদা-পানি জমে যায়। একজন এলাকাবাসী খেদের সঙ্গে বলেছেন, ‘সরকার খালি হামারটে টাকায় নেয়। কিন্তু হামার দুঃখ–কষ্ট দেখে না। তারাগঞ্জ হাটোত জায়গা না থাকায় হামরা কষ্টের ফসল বসি বেচবার পারি না। আস্তাত (রাস্তা) দঁাড়ে কম দরে বেচবার নাগে।’
তারাগঞ্জ বাজারের দুরবস্থা সম্পর্কে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি জানেন না বলে যে সাফাই গেয়েছেন, তা মানা যায় না। তাঁরা সরকারি কর্মকর্তা কিংবা জনপ্রতিনিধি যা–ই হোন কেন হাটবাজারের অবস্থা তাঁদের জানতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হাটের জায়গার সংকট থাকলে জায়গার ব্যবস্থা করাও ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব।