‘টেন্ডারবাজি’ এ দেশের আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অতি পরিচিত একটি অযুতবিশ্রুত শব্দবন্ধ। হুমকি-ধমকি কিংবা পেশিশক্তির মাধ্যমে সৎ ঠিকাদারদের বিধিবদ্ধভাবে দরপত্র জমা দেওয়া থেকে বিরত রাখার যে ধারা বহুদিন থেকে চলে আসছে, ‘ঐতিহ্যগতভাবে’ তা টেন্ডারবাজি নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ ‘উন্মুক্ত গোপন’ সন্ত্রাস ঠেকাতে সরকার অনলাইনে ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের (ইজিপি) মাধ্যমে দরপত্র কেনাবেচার পদ্ধতি চালু করেছে। এতে সুফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা এ উদ্যোগের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে।
সর্বশেষ ঘটনায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্রী হল নির্মাণে ইজিপির মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে দরপত্র ক্রয়কারী ঠিকাদারেরা বলেছেন, তাঁরা যে দরপত্র কিনেছেন, তা কারও জানার কথা না; কিন্তু অনলাইনে দরপত্র কেনার পরপরই ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা ও চরমপন্থী সংগঠনের নেতাদের পরিচয় দিয়ে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দরপত্র জমা দিতে বারণ করা হয়েছে।
উদ্বেগের কথা হলো, কে কে দরপত্র কিনেছেন বা দরপত্র জমা দিয়েছেন, তার তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় কার্যালয় থেকে ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ এ তথ্য জমা হচ্ছে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে। তথ্য ফাঁস হলে সেখান থেকেই হওয়ার কথা। ইজিপি প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারেরা অনলাইনে দরপত্র কেনেন। ইজিপির দেখভাল করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। আইএমইডির অধীনে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট (সিপিটিইউ) ইজিপি নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ তথ্য ফাঁস হলে সবার আগে সন্দেহের চোখ সিপিটিইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপরই পড়ার কথা।
তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে মৌখিক ও খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়েছেন। সিপিটিইউর শীর্ষ পর্যায় থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে, ‘সিপিটিইউ থেকে ইজিপির তথ্য ফাঁস হওয়া অসম্ভব ব্যাপার’, কিন্তু শর্ষের ভেতরে ভূত তো থাকতেও পারে। এ তথ্য ফাঁসে সিপিটিইউ-সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত, নাকি অন্য কোনো ফাঁক গলে তথ্য ফাঁস হয়েছে, তা দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার। অন্যথায় অনলাইনে দরপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে মানুষের যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তা রাতারাতি নষ্ট হয়ে যাবে।