সিসা কারখানাটি কেন বন্ধ করা হবে না

সম্পাদকীয়

বৈধ–অবৈধ কারখানার কারণে গ্রামবাংলার পরিবেশ এখন বিপর্যস্ত। বৈধ কারখানাগুলো পরিবেশ আইন মানছে কি না, তা নিয়মিত তদারকি করা হয় না। অবৈধ কারখানাগুলোও বন্ধ হয় না। একের পর এক অভিযান চালানোর পরও তেমন একটি সিসা কারখানা শ্রীপুরের জনজীবন ও পরিবেশকে বিনষ্ট করে ফেলেছে। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই কীভাবে এ কারখানা চলছে? অনুমতি থাকলেও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে কারখানাটি চলতে পারে কি না?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকার অদূরে শিল্পনগর গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে কারখানাটির অবস্থান, যেটির নাম ডেলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড। গ্রামে জমি ভাড়া নিয়ে ২০১৫ সালের দিকে একটি চীনা কোম্পানি এই কারখানা করে। ২০২০ সালের দিকে কারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য ও পানির ক্ষতিকর প্রভাব গ্রামবাসী পেতে শুরু করে, তখন থেকে গাছের পাতা মরে যাওয়া শুরু হয়। জমির ঘাস খেয়ে পেট ফুলে মারা যায় অনেক গেরস্তের গরু-ছাগল। কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের গাছে ফল ধরা কমতে থাকে। এলাকায় শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে যায়। পরে কারখানা বন্ধ করতে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। দুবার কারখানাটি সিলগালা করে পুলিশ প্রশাসন; কিন্তু অদৃশ্য কারণে কারখানাটি আবার চালু হয়।

শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন কারখানায় কাজ করা শ্রমিকেরাও। কয়লা ও রাসায়নিক দিয়ে কাজ করার কারণে তাঁদের শ্বাসকষ্ট ও চুলকানি হয়। এই কারখানায় শ্রমিকেরা ভালো বেতন পান। তবে বেশির ভাগ শ্রমিক এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করেন না। গ্রামের যাঁদের জমি ভাড়া নিয়ে কারখানাটি গড়ে উঠেছে, তাঁদের একজনের বক্তব্য, কারখানার দূষিত পানিতে তাঁর জমির মাটি ফেটে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে। সেখানে এখন কোনো শস্য হয় না। কারখানার কারণে এলাকার এমন সমস্যা হবে বুঝলে তিনি জমি ভাড়া দিতেন না।

অবৈধ কারখানাটি এত দিন ধরে চলছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, কারখানাটির বিষয়ে আগে জানত না। তারা দুই সপ্তাহ আগে তথ্য পেয়েছে। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কারখানাটিতে অভিযান চালানো হবে।

একটি গ্রামের করুণ দশা ডেকে নিয়ে এসেছে অবৈধ একটি কারখানা, সে ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু জানেন না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমরা আশা করব, এবার অভিযান চালিয়ে কারখানাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। জনজীবন ও পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে দেওয়া এমন কারখানা কোনোভাবেই থাকতে পারে না।