প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করবে।’ এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সরকারের এক নম্বর কাজ বলে অভিহিত করেছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক পুলিশ সদস্য মারা যান। এরপর পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। পুলিশের উচ্চপর্যায়ে রদবদল হলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম গত বুধবার সব পুলিশ সদস্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। শুক্রবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আইজিপি আহূত সভাও হট্টগোলের মধ্যে শেষ হয় অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে।

এসব পরিস্থিতি সত্ত্বেও মাঠপর্যায়ের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। শনিবার নতুন করে সারা দেশে আরও ১৭৭টি থানা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে। শুক্রবারও বেশ কিছু থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মুঠোফোনে পাঠানো খুদে বার্তায় জানানো হয়, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা ইতিবাচক ঘটনা।

এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত–সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই আতঙ্কে আছেন। যেকোনো রাজনৈতিক পালাবদলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অনেক সংস্থা তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।

পুলিশের অনুপস্থিতিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। কিন্তু এটা তো বেশি দিন চলতে পারে না। গত দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। আজ থেকে অফিস–আদালত খুলে দেওয়ায় শহরে যানবাহনের চাপ বাড়বে। চাপ বাড়বে সড়ক–মহাসড়কেও। এ অবস্থায় অবিলম্বে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পেশাদার লোকবল নিয়োগের বিকল্প নেই। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাঠে থাকাও সম্ভব হবে না। সেটা ঠিকও নয়।

ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে জনজীবনের নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা জরুরি। কিন্তু যাঁরা এই কাজ করবেন, তাঁরাই যদি কর্মস্থলে না আসেন, তাহলে অরাজক অবস্থা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। অবিলম্বে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সব সদস্য যাতে কাজে যোগ দেন, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অতি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনাও সম্ভব হবে না। প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও এটা বুঝতে হবে।