সরকারি পরিসংখ্যানে চট্টগ্রাম শহরে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের বসবাস। এমন জনবহুল শহরের শিশু–কিশোরদের বিনোদনের জন্য একটি শিশুপার্কও সচল নেই। তিনটি শিশুপার্ক থাকলেও বিগত সরকারের সময় একটি বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন এবং সরকার পতনের পর বাকি দুটি পার্কের ইজারাদার আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সেগুলোতে তালা ঝুলছে। ফলে এত বড় নগরে এখন শিশুদের জন্য আর কোনো বিনোদনকেন্দ্র নেই। বিষয়টি হতাশাজনক।
শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশে ঘোরাঘুরি ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে বিপুল হত্যাকাণ্ড ও সহিংস ঘটনা নানাভাবে শিশু–কিশোরদের মানসিকভাবে আক্রান্ত করেছে। তাদের মানসিক পরিচর্যা জরুরি। এর জন্য শিশুদের বিনোদনমূলক কার্যক্রমে যুক্ত করা খুবই কার্যকর উপায়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এর জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও বিনোদনকেন্দ্র নেই।
গত বছর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত নগরের সবচেয়ে পুরোনো শিশুপার্কটি ভেঙে ফেলা হয়। এ কারণে আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশুপার্ক ও চঁাদগাঁওয়ের স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক ছিল শিশুদের বিনোদনের স্থান। পার্ক দুটির প্রথমটি গণপূর্ত বিভাগের এবং অন্যটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন। গত ৫ আগস্ট থেকে এই দুই পার্কেও তালা ঝুলছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আত্মগোপন রয়েছেন পার্কের ইজারাদারেরা। এর মধ্যে একটি পার্কে লুটপাটের ঘটনা ঘটায় ভয়ে আরেকটি পার্ক বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এখন ফয়’স লেকে সব বয়সী মানুষের জন্য একটি বিনোদনকেন্দ্র থাকলেও সেখানে সব আয়ের মানুষের যাওয়ার সাধ্য নেই।
মাঠ ও পার্কস্বল্পতায় অধিকাংশ অভিভাবক শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন কিডস জোনের দিকে ঝুঁকছেন। এতে খরচের পাশাপাশি শিশুরা কেবল চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে যাচ্ছে। মুক্ত বাতাসে হাঁটাচলা ও দৌড়াদৌড়ির সুযোগ কমে যাওয়ায় শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে, শিশুরা মুঠোফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্ত হচ্ছে।
কর্ণফুলী শিশুপার্কের জন্য জমি ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ফলে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে শিশুপার্কটি দ্রুত চালু করা যায়, সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। অন্য দুই শিশুপার্কের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক পরিদর্শন করেছেন। এটি চালুর জন্য একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ ছাড়া কাজীর দেউড়ি পার্কের স্থানে শিশুবান্ধব কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
আমরা আশা করব জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন শিশুপার্কগুলো চালু করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। এ ছাড়া বিপ্লব উদ্যান, জাম্বুরি পার্কসহ অন্য উন্মুক্ত জনপরিসরগুলোকে আরও শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলবে।