সড়ক দুর্ঘটনা যেন এ দেশে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। একেকটা ঘটনায় একাধিক মানুষ কিংবা গোটা পরিবার পর্যন্ত মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে নিয়মিত খবরও প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে মানুষের মনে সড়ক দুর্ঘটনা তেমন রেখাপাতই করতে পারছে না। সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হলেও সেটি আর বাস্তবায়িত হয় না। ফলে এখানে গাড়িমালিক, চালক, যাত্রী কাউকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে দেখি না আমরা। আইন প্রয়োগ না হওয়ার ফলে যে চিত্র আমরা দেখতে পাই, তার একটি ভয়াবহ নমুনা হতে পারে উল্টো পথে যান চলাচল। কোনো সভ্য দেশে এমনটা দেখা না গেলেও, আমাদের দেশে চালকেরা উল্টো পথে গাড়ি চালনাকে মনে করেন অধিকার। এর ফলে শুধু সড়ক দুর্ঘটনাই বাড়ছে না, বাড়ছে প্রাণহানিও।
মহাসড়কগুলোতে ধীরগতির তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তা মানছে না কেউ। তাদের থামানোরও কেউ নেই যেন। শুধু তা-ই নয়, উল্টো পথেও চলছে তিন চাকার যানগুলো। দেশের অন্যতম ব্যস্ততম রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উল্টো পথে তিন চাকার যান চলাচল রীতিমতো নিয়মেই পরিণত হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর এ মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুতে উল্টো পথে উঠছিল একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এ সময় ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষে অটোরিকশায় থাকা পাঁচজনের প্রাণ যায়। এরপর ১২ অক্টোবর আড়াইহাজারের পাল্লা এলাকায় বাসের সঙ্গে উল্টো পথের একটি অটোরিকশার সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়। এরপরও কিন্তু উল্টো পথে তিন চাকার যান চলাচল থামেনি। প্রশাসন ও টহল পুলিশের ব্যর্থতা এখানে মোটাদাগে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু এই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইল ও কাঁচপুর সেতুতে দীর্ঘদিন ধরে উল্টো পথে চলছে ধীরগতির তিন চাকার বিভিন্ন যান। এসবের মধ্যে রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক ও রিকশা-ভ্যান। এখানে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট থাকায় সেগুলো এড়াতে উল্টো পথে চলে এসব যান। হাইওয়ে পুলিশের বক্তব্য, জনবলসংকটের কারণে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। এরপরও অবৈধ যান আটক করা হয়, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তবে আমরা এ–ও জানতে পারছি, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে সুযোগ করে দিচ্ছে পুলিশ নিজেই। সেখানে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট বলা যায়। তাহলে এসব দুর্ঘটনার দায় কি পুলিশের ওপরেও বর্তায় না? জনবলসংকট মিটিয়ে সেখানে পুলিশের অনিয়ম বন্ধ করা হোক। এখানে স্থানীয় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত। তিন চাকার যানের কারণে আমরা মহাসড়কটিতে আর কোনো দুর্ঘটনা দেখতে চাই না।