প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে

সম্পাদকীয়

একসময় বাংলাদেশের ট্রেনযাত্রা সম্পর্কে মজার কৌতুক চালু ছিল। নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়বে। ট্রেন সেই অবস্থা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সাম্প্রতিক কালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য।

১০ জুলাই প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বিমানের ৩০ শতাংশের বেশি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে ছাড়ে। গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরের বিমানের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের চেয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিলম্বের মাত্রা বেশি। কোনো কোনো মাসে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।

একটি বিমান পরিবহন কতটা সময় মেনে চলে, তা বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার অন টাইম পারফরম্যান্স বা ওটিপি থেকে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমানের পক্ষ থেকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই এক বছরে বিমান বহির্গমন (ডেপারচার) ওটিপির গড় ৬৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর অবতরণের ওটিপির গড় ৬৬ শতাংশ। এর অর্থ ৩০ শতাংশের বেশি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের পরে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।

বিমানের পক্ষ থেকে এর কারণ হিসেবে বৈরী আবহাওয়া, অতিরিক্ত হজ ফ্লাইট পরিচালনা এবং উড়োজাহাজ–স্বল্পতার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে বৈরী আবহাওয়াজনিত বিলম্বটি মেনে নেওয়া যায়। এর ওপর বিমান কর্তৃপক্ষের হাত নেই। কিন্তু অন্য কারণগুলো চাইলেই বিমান দূর করতে পারত। প্রতিবছর অতিরিক্ত হজ ফ্লাইটের মাধ্যমে বিমান বড় অঙ্কের আয় করে। সে ক্ষেত্রে তারা বাড়তি উড়োজাহাজের ব্যবস্থা কেন করবে না? স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বিমানের নিজস্ব বহরে ২১টি উড়োজাহাজ থাকা মোটেই কৃতিত্বের বিষয় নয়। বছরে একটি উড়োজাহাজ কিনলেও বিমান ৫৩টি উড়োজাহাজের মালিক হতে পারত।

ফ্লাইট ছাড়ার বিলম্বের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় চেক ইন কাউন্টার ও বোর্ডিং গেট না থাকার কথা বলেছে। কিন্তু সরকার বিমানবন্দরের উন্নয়নে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও কেন ন্যূনতম চেক ইন কাউন্টার ও বোর্ডিং গেট করতে পারল না, সেই প্রশ্নের জবাবও তাদের দিতে হবে। বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করার পরও সেখানে বিমান চলাচল শুরু করতে না পারা দুঃখজনক। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে চেক ইন কাউন্টার ও বোর্ডিং গেট সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতো।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ফ্লাইট বিলম্বকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বিমানের ফ্লাইট বিলম্ব এর চেয়ে অনেক বেশি। এটা অবিলম্বে কমিয়ে আনতে না পারলে প্রতিযোগিতায় তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। একসময় বিদেশি যাত্রীদের আকর্ষণ করতে পেরেছিল বিমান। এখন দেশের যাত্রীরাও বিকল্প পরিবহন থাকলে বিমানে উঠতে চান না।

এর আগে প্রথম আলোর আরেক খবরে বলা হয়েছিল, বিমান এয়ারলাইনস–বহির্ভূত পোলট্রি, ক্যাটারিং খাতে ভালো আয় করলেও যাত্রীসেবায় পিছিয়ে আছে। আকাশপথে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। বিদেশি বিমান পরিবহন সংস্থার কথা বাদ দিলেও দেশের একাধিক বেসরকারি বিমান পরিবহন লাভ করছে এবং একের পর এক রুট বাড়াচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিমানের বিলম্বিত ফ্লাইট প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে। মনে রাখতে হবে, বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই বিমানকে টিকে থাকতে হবে; জনগণের করের অর্থে ভর্তুকি দিয়ে নয়।