বেড়ায় আত্রাই নদকে রক্ষা করুন

সম্পাদকীয়

দেশে শিল্পায়ন হলে কর্মসংস্থান বাড়ে। কিন্তু অনেক কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদ-নদীতে ফেলায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। দেশের খুব কম নদ-নদীই আছে, যা কারখানার বর্জ্যে দূষিত নয়। পাবনার বেড়া উপজেলার আত্রাই নদও কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। জনজীবনে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার খাস আমিনপুর গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গত ১০ বছরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সুতা রং ও প্রক্রিয়া করার চারটি কারখানা। কারখানাগুলোতে ব্যবহার করা হয় নাইট্রিক অ্যাসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, কস্টিক সোডা, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, লবণসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ। এতে প্রতিদিনই কারখানা থেকে বের হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত বর্জ্য। সেই বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে আত্রাই নদে ফেলায় দূষিত হয়ে পড়েছে পানি। বর্ষা চলে আসায় নদের পানির মাধ্যমে বিষাক্ত বর্জ্য খাস আমিনপুরসহ অন্তত পাঁচটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিষাক্ত বর্জ্যের পানি মাছের ঘেরে ঢুকে শুধু দুই দিনে অর্ধকোটি টাকার মাছ মারা গেছে। খাস আমিনপুরের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ উঠেছে, তা এই একটি উদাহরণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেখানকার গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের অনেকেই ভুগছেন চুলকানি, চর্মরোগ ও পেটের পীড়ায়। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে পড়েছে যে গোসল করা তো দূরের কথা, সেই পানিতে কেউ নামলেই চুলকানিসহ চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। অনেক বাড়ির হাঁস-মুরগি, গাছ ও খালের মাছ মরে যাচ্ছে।

গত বছরও কারখানার বর্জ্য বাইরে ফেলার ঘটনা ঘটে। তখন স্থানীয় প্রশাসন সেখানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। সেই সঙ্গে বর্জ্য নদে না ফেলার ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও নদে বর্জ্য ফেলা থামেনি।

কারখানার ক্ষেত্রে বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি থাকা বাধ্যতামূলক। খরচ বাঁচাতে অনেক কারখানায় ইটিপি চালু রাখা হয় না। বর্জ্য ফেলা হয় সরাসরি বাইরে। এখন খাস আমিনপুরের এসব কারখানা তো বৈধই নয়, সেখানে ইটিপি থাকার আশা করাও বাতুলতা। ফলে কারখানাগুলোর বর্জ্য বাইরে ফেলা হবে, সেটিই প্রত্যাশিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বছরের পর বছর অবৈধভাবে কারখানাগুলো কীভাবে চলছে? স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কারখানা চালুর ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য যে কর্তৃপক্ষ আছে, তারা সেখানে কী করছে?

 এখানে হয় দায়িত্বে অবহেলা আছে, নয়তো কোনো অনিয়ম আছে। তাদের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি থাকার কারণেই আজ স্থানীয় জনসমাজ ও পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।