মৃত্যু-নিখোঁজ রোধে উদ্যোগ নেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে সমুদ্রে নৌযান চলাচল এখন আরও বেশি নিরাপদ। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জাহাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও মাছ ধরার ট্রলারের ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি বিপরীত। ফলে সাগরে ট্রলার ডুবে জেলেদের মৃত্যু এখানে নিত্যকার ঘটনা যেন।

মৃত্যু ছাড়াও অনেক জেলে নিখোঁজ হয়ে যান, যাঁদের আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিবেশী দেশের জলসীমায় চলে যাওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। তখন ভিনদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তাঁদের গ্রেপ্তার হয়ে সেখানকার জেলে দিনের পর দিন পড়ে থাকতে হয়। মাছ ধরার ট্রলারগুলোয় কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকার কারণে বছরের পর বছর এমন দৃশ্য আমাদের দেখতে হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত সপ্তাহে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজার ও ভোলায় কয়েকটি ট্রলার ডুবে নয়জন জেলের মৃত্যু হয়। একই ঝড়ের কবলে পড়ে বরগুনায় ৮টি ট্রলার ডুবে গত রোববার বিকেল পর্যন্ত ৩১ জন জেলে নিখোঁজ ছিলেন। এ ছাড়া পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার ৪৪ জন জেলে ভেসে ভারতের জলসীমায় চলে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আটকে আছেন।

সমুদ্রকেন্দ্রিক জেলেদের কারণে দেশের মাছের চাহিদার বিশাল একটি অংশ পূরণ হয়। এমনকি সেসব মাছ বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও আসে। অথচ তাঁদের নিরাপত্তায় ট্রলারগুলোয় লাইফ জ্যাকেট, পর্যাপ্ত বয়া, দিকনির্ণয়ের যন্ত্রপাতি থাকে না।

এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও জেলেরা এখনো গভীর সাগরে আকাশের তারা দেখে দিক নির্ণয় করেন। এতে তাঁরা ঝড়ের কবলে পড়ে বিপদগ্রস্ত হন। জেলেদের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ হাজার ৩৫০ জনের বেশি জেলে শুধু নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে সাগরে মারা যান। বিষয়টি এভাবে চলে এলেও সমুদ্রকেন্দ্রিক মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নৌযানগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। এর ফলে উপকূলের কয়েক লাখ সমুদ্রগামী জেলের জীবন প্রায়ই বিপন্ন হয়।

আরও হতাশাজনক হচ্ছে, মালিকপক্ষই ট্রলারে জেলেদের নিরাপত্তায় লাইফ জ্যাকেট দিতে আগ্রহী নন। কারণ, ঝড়ের সময় জেলেরা ট্রলার ফেলে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে জীবন বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপ দেবেন। এতে মালিকদের ট্রলার ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিষয়টি খুবই অমানবিক।

আমরা মনে করি, মালিকদের এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনাসহ মাছ ধরার ট্রলারে সব ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি কার্যকর উদ্যোগ ও কর্মসূচি নেওয়া হোক। এ ছাড়া নিহত, নিখোঁজ ও পঙ্গু হলে সরকারি নীতি অনুসারে ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন অধিকাংশ জেলে। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।