হাসপাতালটি কীভাবে চলবে

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় চলে গেছে, এমন কথাবার্তা আমরা শাসকশ্রেণির কাছে শুনে থাকি। কিন্তু এখানে আছে ভিন্ন বাস্তবতা, আছে শুভংকরের ফাঁকি। কারণ, হাসপাতাল হয়েছে ঠিকই, দেখা গেল ভবন পড়ে আছে। চালু হলেও দেখা যায় চিকিৎসক নেই, আছে জনবল–সংকট। সব ঠিক আছে কিন্তু দেখা যায় যন্ত্রপাতি নষ্ট। সরকারি অনেক হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন চিত্র আমরা দেখি। যেমনটি দেখছি ঝিনাইদহের একটি হাসপাতালের ক্ষেত্রে, যেখানে কর্মচারী নেই বললেই চলে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঝিনাইদহের ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতাল হিসেবে ঝিনাইদহ শহর ও আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে সুনাম কুড়িয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। মানুষ আস্থাও রাখেন। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতালটির ওপর নজর নেই। বারবার অনুরোধ করেও জনবল, যন্ত্রপাতি ও অর্থসহায়তা পান না এই ছোট হাসপাতালের কর্মকর্তারা। এমন সংকট নিয়েই চলতে হচ্ছে হাসপাতালটিকে।

২০০৫ সালে এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ধীরে ধীরে হাসপাতালটি স্থানীয় মানুষের আস্থা অর্জন করে। যার কারণে হাসপাতালের নানা প্রয়োজনে এবং সহায়তা নিয়ে মানুষই এগিয়ে আসেন। যশোরের কিছু ব্যবসায়ী, কয়েকজন চিকিৎসক এবং আলী হাসান ফরিদের একাধিক বন্ধু অর্থ, শয্যা, যন্ত্রপাতি ও জনবল দিয়ে সহায়তা করছেন। ঝিনাইদহ পৌরসভা এবং জাহেদি ফাউন্ডেশন নিয়মিত সহায়তা করে। এ ছাড়া ১৫ জন কিছু সহায়তা দেন। শুধু তা–ই নয়, হাসপাতালের পেছনে গড়ে তোলা কলাবাগানের কলা বিক্রি করে মেটানো হয় অক্সিজেন কেনার খরচ। এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করে চৌগাছা উপজেলা হাসপাতাল পরিচালনার মাধ্যমে সুনাম কুড়িয়েছেন চিকিৎসক এমদাদুল হক। এমন মানবিক চিকিৎসকের প্রতি আমাদের অভিবাদন। কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাড়া এভাবে হাসপাতালটি কত দিন চলবে?

হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে পাঁচটি, নিয়মিত পদে আছেন তিনজন। আর তিনজন চিকিৎসক প্রেষণে কাজ করেন। ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি), প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও স্টোরকিপারের পদ খালি। নার্সের ২১টি পদের বিপরীতে আছেন ১৭ জন। এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, মশালচি, মালি, নিরাপত্তা প্রহরী ও সুইপার, এসব পদই নেই।

হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জনবল ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখায় অনেকবার আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। সর্বশেষ আবেদন জানানো হয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আমরা আশা করব, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ হাসপাতালের সংকটগুলো নিরসনে এগিয়ে আসবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত কর্মচারী পাঠিয়ে হাসপাতালটির কর্মতৎপরতা আরও বৃদ্ধি করবে।