অন্তত পলিথিন নিষিদ্ধ আইনটি কার্যকর করুন

সম্পাদকীয়

পরিকল্পিতভাবে নগর তৈরি না হলে, পানিনিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে নাগরিকদের যে মহাভোগান্তিতে পড়তে হয়, শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিই তার প্রমাণ। এর আগেও একাধিকবার ভারী বর্ষণে ঢাকা শহর ডুবে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানা নেই।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত চার বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর আগে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছিল ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু নগরবাসীর জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সড়কে যানবাহন ও মানুষের চাপ কম ছিল। কিন্তু ডুবে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে বিকল হয়ে পড়ে ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ও প্রাইভেট কার। অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ঢাকাবাসীকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। এতে শহরের বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকে। দুপুরে বৃষ্টি থেমে গেলেও রাত, এমনকি শনিবার সকালে কিছু এলাকায় পানি জমে ছিল।

মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হলে যেকোনো শহরে জলাবদ্ধতা হতে পারে। কিন্তু সেই পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা তো থাকতে হবে। ২০২১ সালের আগে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। সে সময় বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে গেলে সিটি করপোরেশন দায় চাপাত ঢাকা ওয়াসার ওপর। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) দেওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে।

গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস আশ্বাস দিয়েছিলেন, বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি নিষ্কাশিত হবে। ২০১৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, ‘আমি প্রমিজ (অঙ্গীকার) করছি, সামনের বছর থেকে আর জলাবদ্ধতা দেখবেন না।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক আশ্বাস ও অভয়বাণী শোনা গেছে। ভবিষ্যতেও শোনা যাবে। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে এ ধারকা মাল ওধার করার মতো দায়িত্ব পরিবর্তন করলে জলাবদ্ধতা কমবে না।

পানিনিষ্কাশনের জন্য প্রথমত খালগুলো দূষণ ও দখলমুক্ত রাখতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ও প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার। এটা বন্ধ করা দরকার। এ জন্য সরকারকে নতুন করে আইনও করতে হবে না। অন্তত ২০০২ সালে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করে যে আইন করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়ন করুক।

অন্যদিকে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে। নাগরিকেরা যদি সব ময়লা–আবর্জনা ও বর্জ্য যত্রতত্র ফেলতে থাকেন, তাহলে যেমন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হবে, তেমনি খাল ও নালাগুলোও বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে। প্রবাদ আছে, ‘নিজের ভালো পাগলেও বোঝে।’ ঢাকার বাসিন্দারা কবে বুঝবেন?