দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এটি রীতিমতো মহামারি আকার ধারণ করেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে। এরপরও সড়ক নিরাপদ করার আন্তরিক উদ্যোগ তেমন দেখা যায়নি কোনো সরকারের আমলেই। আইন থাকলেও তা যথাযথ প্রয়োগ হয় না। ফলে সড়কের মৃত্যুর সারি দিন দিন লম্বাই হচ্ছে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আইন না মানার প্রবণতাও আমরা দেখি। এর মধ্যে অন্যতম, সড়কে উল্টো পথে গাড়ি চালানো। সেটিই চরমভাবে ভোগাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ২৮ আগস্ট একটি বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন হারিস আলী নামের একজন নিরাপত্তাকর্মী। সড়কটিতে উল্টো পথে আসা ইজিবাইকের কারণেই বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যান তিনি। সংসারের অভাব ঘোচাতে সদ্য তরুণ ছেলেকেও নিজের পেশায় নিয়ে এসেছিলেন হারিস। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ নয়াবাড়ি এলাকার রহিম স্টিল মিলসে কাজ করতেন তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের এ কারখানার সামনেই তিনি নিহত হন। এখন তাঁর সাত সদস্যের সংসারের বোঝা এসে পড়েছে সেই তরুণ ছেলের কাঁধে।
দুই লেনের এ মহাসড়কের চট্টগ্রামগামী লেনের পাশে ৫০০ মিটারের মধ্যে অন্তত ১২টি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং সড়কের উভয় পাশে ২টি উচ্চবিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি মাদ্রাসা ও ২টি কিন্ডারগার্টেন অবস্থিত। ব্যস্ততম মহাসড়কটির উভয় পাশেই হরদম উল্টো পথে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা, এমনকি বাস চলাচল করছে। উল্টো পথে বেশি যান চলাচল করে নয়াবাড়ি গ্রিন লাইন পরিবহনের ডিপো থেকে কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পর্যন্ত। এসব যান চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতাও নেই।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, মহাসড়কের নয়াবাড়ি এলাকা একটি মৃত্যুফাঁদ। প্রতি সপ্তাহেই এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এর প্রধান কারণ উল্টো পথে যান চলাচল ও পথচারী পারাপারে পদচারী-সেতু না থাকা। নয়াবাড়ি এলাকায় একটি পদচারী-সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী বছর দুয়েক আগে আবেদন করেছিলেন; কিন্তু সেতু হয়নি। ফলে মৃত্যুর মিছিলও থামেনি। আরও দুঃখজনক হচ্ছে বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরাই বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য, কাঁচপুর থেকে মেঘনা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কের অলিগলি থেকে হঠাৎ ইজিবাইক ও রিকশাগুলো প্রধান সড়কে চলে আসে। চেষ্টা করেও সব সময় উল্টো পথে যান চলাচল আটকানো যায় না। নয়াবাড়ি এলাকাটি শ্রমিক-অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে দুর্ঘটনা বেশি হয়। এখানে একটি পদচারী-সেতু খুবই জরুরি। উল্টো পথে যান চলাচল বন্ধে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি জানান।
আমরা আশা করি, হাইওয়ে থানা সত্যিকার অর্থেই সেখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া সেখানে একটি পদচারী–সেতু নির্মাণ করা হোক। নয়াবাড়ি এলাকায় সড়কে মৃত্যুর ঘটনা থামাতেই হবে।