কইয়ের তেলে কই ভাজা নয়, ঠাকুরগাঁওয়ে যা চলছে তাকে অরাজকতা বলাই শ্রেয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করেছে। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
ঘটা করে চলছে উদ্বোধন। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য যাচ্ছেন। সরকারের উন্নয়নকাজের প্রচার করছেন। এটুকুতে তিনি থামলে কথা উঠত না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের তহবিল ভেঙে ঘটা করে অনুষ্ঠান করছে।
কোথাও কোথাও আবার তহবিল-সংকটের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অন্যরা চাঁদা তুলছেন। এই চাঁদা লাগছে অনুষ্ঠানের মঞ্চ, প্যান্ডেল, শব্দযন্ত্র, আপ্যায়নসহ অন্য ব্যয় মেটাতে। চাঁদার এ অঙ্ক ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট বলছে, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের লক্ষ্যে একটা প্রকৌশল ইউনিট হয়েছিল। সেই ইউনিটই পরে অধিদপ্তর হয়। এটির দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনগুলোর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার এবং আসবাব সরবরাহ করা।
অধিদপ্তরের দাবি, তাদের ‘নিবেদিত’ প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নততর অবকাঠামো তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর অর্থ ঠাকুরগাঁওয়ের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সারা দেশে স্থাপনাগুলো দেখভাল করার জন্যই এই অধিদপ্তরের সৃষ্টি। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের পর উদ্বোধন অনুষ্ঠান হতেই পারে। কিন্তু শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী ইকবাল নিজেই বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন কাজে যে পাথরটি ব্যবহৃত হয়, সেটা ছাড়া প্রকল্পে অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো বরাদ্দ নেই। এসব আয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচেই হয়ে আসছে। তবে কোথাও কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার সহযোগিতা করেছেন।
দেশের একটা বড় অংশের মানুষ এখনো দরিদ্র। প্রতিবছর মাঝপথে বহু শিশুকে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়। তারা অপুষ্টিতে ভোগে। ঝরে পড়া আর অপুষ্টি রোধে মিড ডে মিল চালুর ব্যাপারে কথাই কেবল চলছে।
কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিশুরা পেট ভরে খেয়ে মজবুত ভবনে বসে নিরাপদে লেখাপড়া করবে, এ তাদের অধিকার। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে শিশুদের এই অধিকার নিশ্চিত করায় ভূমিকা রাখবেন সংসদ সদস্য। আর সরকারি কর্মচারীরা তাঁর নির্দেশনায় কাজ করবেন।
দেখা যাচ্ছে সংসদ সদস্য এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন মেহমানের মতো। তিনি সেখানে গিয়ে ভোট চাইছেন। কিন্তু তাই বলে শিশুদের হক মেরে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে নেওয়া বা শিক্ষকদের কাছ থেকে অনুষ্ঠানের খরচ তোলা কতটা যুক্তিযুক্ত?
দেশজুড়ে বড়-ছোট যত উন্নয়ন প্রকল্প চলছে, তার সবটাই নাগরিকের, এ জন্য তাঁরা কর দেন। এগুলো কারও দয়ার দান নয়, সংসদ সদস্যরা যত দ্রুত বুঝবেন, ততই মঙ্গল।