ইটভাটার মালিকদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ইটভাটা নিয়ে দেশে সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয় না। অসংখ্য ইটভাটাই চলে কোনো ধরনের ছাড়পত্র ছাড়াই। ইটভাটাগুলো শুধু কৃষিজমি আর পরিবেশের ক্ষতিই করছে না, জনজীবনকেও বিষিয়ে তুলছে। বরগুনা সদর উপজেলায় একটি ইটভাটার মালামাল পরিবহনের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। এর ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সদর উপজেলায় কুমড়াখালী গ্রামে এসবিসি নামের একটি ইটভাটার জন্য নদ থেকে বালু ও মাটি এবং নৌযানে করে আনা অন্য মালামাল সহজে আনা ও নেওয়ার জন্য বাঁধটি কেটে পথ তৈরি করা হয়। বাঁধ কেটে ফেলায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে জমির ফসল ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে নদ ভরাট করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ইটভাটাটির মালিক বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। যদিও তিনি ইটভাটাটি কিনেছিলেন আরেক ব্যক্তি থেকে। এর আগেই বাঁধ কেটে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। এরপর সেভাবেই আছে পথটি ব্যবহার হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সিদ্দিকুর রহমান আত্মগোপনে।
বাঁধ কেটে পথ নির্মাণ করার ঘটনার বিষয়টা সম্পর্কে জানেন না বলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বরগুনা সদর উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা)। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, বাঁধটি কেটে পথ তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘খাকদোন নদের তীরে আমাদের সীমানাখুঁটি স্থাপন করা আছে। ভাটায় দখল হওয়া জমি আমাদের হলে ভাটামালিকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা নদের তীরে অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদের জন্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠিয়েছি।’ বরগুনা সদরের ইউএনওর বক্তব্য, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বাঁধ কাটার কোনো অনুমতি নেই। কেউ যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন, তাহলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
একটি বাঁধ কেটে কালভার্টের আদলে পথ বানানো হয়েছে, সেটি বছরের পর বছর ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর জন্য কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ভুক্তভোগী হচ্ছেন, তা এতগুলো কর্তৃপক্ষের গোচরেই এল না, বিষয়টি হতাশাজনক। আমরা জেনেছি, ইটভাটাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনপত্রের নবায়নও করা হয়নি। আমরা আশা কবর, এ ব্যাপারে ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পথটি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে। পরেও যেন সেখানে পথ করার সুযোগ না থাকে।