রাজনৈতিক পরিচয় যে একটা ক্ষমতা, আর সেই ক্ষমতার বলে আমজনতার সঙ্গে যা খুশি তা–ই করা যায়—এর একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন যুবলীগ নেতা। আমঝুপি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের এই সাধারণ সম্পাদক খাসজমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর ফলে একটা পাকা সড়ক ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যাচ্ছে, খোকশা নামক গ্রামের পাকা সড়কের গা ঘেঁষে চার কাঠা খাসজমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন মনজুরুল ইসলাম। ওই জমি দিয়ে কৃষকেরা খেতের ফসল নিয়ে যাতায়াত করতেন। এখন খেতের ফসল কেটে বাড়ি নেওয়ার কোনো রাস্তা থাকল না।
মনজুরুল ইসলামের দাপটের এখানেই শেষ নয়। তাঁর মূল ব্যবসা কৃষিজমির মাটি কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করা। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এলাকার কয়েকজনের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর করে দিয়েছেন। ওই পুকুরের মাটি ৬০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেন ইটভাটায়। যুবলীগ নেতা হওয়ার কারণে ভয়ে তাঁকে কেউ কিছু বলতে পারেন না।
তিন ফসলি কৃষিজমিকে পুকুরে পরিণত করার ক্ষতি সুদূরপ্রসারী। আবাসন, শিল্প ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কারণে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। কৃষিজমি সুরক্ষায় ২০০৯ সালে একটা আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। কয়েকবার সংশোধনের পরও প্রস্তাবিত ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন’ চূড়ান্ত হয়নি। খসড়া আইনে কৃষিজমির বাণিজ্যিক বা আবাসিক ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য। কৃষিজমি সুরক্ষার কথা শুধু বললেই হবে না, আইনের মাধ্যমে সেটা কার্যকর করা প্রয়োজন।
যুবলীগ নেতার ভাষ্য হলো, গ্রাম্য বিরোধ থাকার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে এবং মানুষ তঁাদের প্রয়োজনেই তাঁকে দিয়ে মাটি কাটিয়ে নেন, তিনি কাউকে জোর করেন না। অথচ এলাকাবাসী তাঁকে নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন, তা যে মিথ্যা নয়, এর প্রমাণ মিলেছে প্রথম আলোর মেহেরপুর প্রতিনিধির সরেজমিন অনুসন্ধানে।
প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আমঝুপি বাজার থেকে ডান দিকের সোজা পথ খোকশা গ্রামে যাওয়ার সড়কটির একটি অংশের মাটি কেটে গর্ত করা হয়েছে, যাতে কেউ কৃষিজমিতে যেতে না পারেন। এতে এলাকার কৃষকেরা ধান, পাট, গমসহ অন্য ফসল কেটে বাড়িতে না নিতে পেরে বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়েছেন এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করি, এ বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজনৈতিক পদপদবির দাপটে যা খুশি তা–ই করার রেওয়াজ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।