স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় যে আঘাত হেনেছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। লাখ লাখ গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে। ঘরবাড়ি ভেসে গেছে।
তবে একটি বড় ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা বৃহত্তর পরিসরের আলোচনা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। সেটি হলো বন্যার তোড়ে উজান থেকে নামা বালুতে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী এলাকার প্রায় আড়াই শ হেক্টর জমি ঢেকে গেছে। বালুর এই আস্তরণের পুরুত্ব ৩ ফুট থেকে ৭ ফুট।
যে জমিতে কয়েক দিন আগেও ছিল ফসলের সবুজ খেত, সেখানে এখন ধু ধু বালুর চর দেখা যাচ্ছে। মাঠের পর মাঠ ঢেকে গেছে বালুর স্তূপে। নিচু জমি উঁচু হয়ে গেছে। এই বালুর আস্তরণ না সরালে জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। কৃষকেরা বলছেন, বালু অপসারণ করা না গেলে আগামী ১০-১৫ বছরেও এসব জমিতে চাষাবাদ করা যাবে না। তা ছাড়া জমি উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেচ দেওয়া যাবে না। জমিতে ঘাস না থাকায় ইতিমধ্যেই গবাদিপশুর খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এসব জমির ওপর স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা নির্ভর করে। ফলে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না করা হলে এখানকার বহু মানুষ নিদারুণ দারিদ্র্যে ডুবে যাবে। সে কারণে এখন তাঁরা তাঁদের জমি চাষযোগ্য করে তুলতে সরকারি সাহায্য চান।
আড়াই শ হেক্টর এলাকাজুড়ে যে বিপুল পরিমাণ বালু জমেছে, তা অপসারণ স্পষ্টতই দুঃসাধ্য; বলা যায় অসম্ভব। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই কৃষকেরা দাবি করেছেন, হয় দ্রুত সরকারিভাবে জমি থেকে বালুর স্তূপ অপসারণ করা হোক, না হয় যাঁদের জমিতে বালুর স্তূপ জমেছে, তাঁদের বালু বিক্রির অনুমতি দেওয়া হোক।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা এই বালুর মান উন্নত। বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। কিন্তু ফসলি জমি থেকে বালু কেটে বিক্রির বিষয়ে সরকারি বাধ্যবাধকতায় তা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি তাঁদের বালু বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে ক্রেতারাই নিজ উদ্যোগে বালু কেটে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে কৃষক একদিকে নগদ কিছু টাকা পেয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন, অন্যদিকে তাঁর জমিও বালুমুক্ত হয়ে আবাদযোগ্যতা পাবে।
সেই বিবেচনায় কৃষকদের বালু বিক্রির অনুমতি দেওয়া যুক্তিগ্রাহ্য ও যথার্থ হবে।