নিত্য যানজটের ঢাকা শহরে নগরবাসীর চলাচল সহজতর করতে সরকার বেশ কিছু উড়ালসড়ক নির্মাণ করেছে। এসব সড়ক থেকে মানুষ কমবেশি সুফলও পাচ্ছে। আগে নিচের সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যেতে যেখানে এক ঘণ্টা সময় লাগত, সেখানে উড়ালসড়ক দিয়ে ১৫-২০ মিনিটে যাওয়া যায়। যানজটের বিড়ম্বনাও এড়ানো যায়। যদিও উড়ালসড়কগুলো কতটা পরিকল্পিত হয়েছে, সে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন আছে।
শুরু থেকে ঢাকা শহরের উড়ালসড়কে যে দুটি বিপদ যমদূতের মতো ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে, তা হলো দুর্ঘটনা ও ছিনতাই। উড়ালসড়কের নকশাগত ত্রুটি ও বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে চালু হওয়া উড়ালসড়কের মধ্যে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার, যেটি ২০১৩ সালে চালু হয়, সেখানে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
মালিবাগ উড়ালসড়কে ব্যতিক্রমী সিগন্যাল ব্যবস্থা আছে, যেখানে মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময় থাকে না। আবার রাতে সেখানে বাতিও জ্বলে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক কালে উড়ালসড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, উড়ালসড়কে বাতি না জ্বলার কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ছিনতাইকারীরা মালিবাগ উড়ালসড়কে মোহাম্মদ মিলন নামের এক রাইড শেয়ারিং চালককে গলা কেটে হত্যা করে। ২০২০ সালের এপ্রিলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন। ৯ আগস্ট রাতে মালিবাগ থেকে পল্লবীতে যাওয়ার পথে শামীম নামের এক ছাপাখানার কর্মী মগবাজার মোড়ে উড়ালসড়কে ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, শামীম কাজ শেষে রাত সাড়ে ১১টায় মোটরসাইকেল নিয়ে পল্লবীর বাসার উদ্দেশে রওনা হন। উড়ালসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ঠেলে সেটি হোটেল সোনারগাঁও ক্রসিংয়ের দিকে এগোতে থাকেন এবং সড়কের পাশে পানি থাকায় মাঝখান দিয়েই যাচ্ছিলেন। এমন সময় উড়ালসড়কে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকা মীম নামের এক নারী শামীমকে এক পাশ দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনিও সরল মনে পাশে চলে আসেন।
মুহূর্তের মধ্যে উড়ালসড়কের নিচের ‘আস্তানা’ থেকে দুই যুবক এসে চাপাতি দিয়ে শামীমকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। শামীম হাত দিয়ে কোপ ঠেকানোর চেষ্টা করেন। সে সময় বিপরীত থেকে দুটি মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীরা এসে পড়লে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যান। তবে সাহসী শামীম মেয়েটিকে ধরে ফেলেন এবং ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা মেয়েটির সূত্র ধরে সেখানকার ছিনতাইকারী চক্রের কয়েকজনকে আটক করে।
শামীমের ঘটনায় ছিনতাইকারীদের যে কৌশলের কথা জানা গেল, তা অনেকটা রহস্যকাহিনির মতো। উড়ালসড়কের নিচে ছিনতাইকারীরা সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং সংকেত পাওয়ামাত্র পিলারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা দড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায়। এটাই তাদের ছিনতাইয়ের কৌশল।
বাতি জ্বালানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, সন্দেহ নেই। কিন্তু ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজটি তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা ডিএমপিকেই করতে হবে। তাদের নাকের ডগায় উড়ালসড়কের নিচে ছিনতাইকারীরা আস্তানা বানাল কীভাবে?
ডিএমপি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে যতটা সময় দেয়, তার সিকি ভাগও ছিনতাইকারীদের ধরতে ব্যয় করলে ঢাকা শহরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি অনেকাংশে কমে যেত। আশা করি, উড়ালসড়কগুলো নিরাপদ রাখতে ডিএমপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং ভবিষ্যতে নগরবাসীকে আর ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হতে হবে না।