জাতীয় পার্টি আহূত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, বিপজ্জনক বলে মনে করারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সহিংসতা ও জবরদস্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটবে এবং যেকোনো রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারবে।
কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবার সহিংসতা ফিরে আসাটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুক্রবারের কর্মসূচি সফল করতে দলের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন। এরই মধ্যে একদল লোক মিছিল নিয়ে এসে সেখানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। অন্যদিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা’র পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে হামলা চালানো হয়।
দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার আহূত জাতীয় পার্টির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আরেক দফা উত্তেজনা হয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতার ব্যানারে সেই সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
শুক্রবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, তাঁরা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন না; বরং স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তাঁরাও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। যেকোনো মূল্যে শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা নামের সংগঠনটি একই স্থানে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এ অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল রাজধানীর কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করলে দুই পক্ষই কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষ রাজনৈতিক সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে, যা পরে এক দফা দাবিতে রূপ নেয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। সেই সময়ে কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা নামে পৃথক কোনো সংগঠনের তৎপরতা দেখা যায়নি। এ দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক কী, তা-ও আমরা জানি না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের ওপর জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলা করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেউ কেউ ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফোরামের সিদ্ধান্ত ছিল না। তবে জাতীয় পার্টির কর্মসূচি নিয়ে আপাতত আমাদের কোনো কর্মসূচির চিন্তা নেই।’
যে সংগঠন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিল, সেই সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়মুখী কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা যেখানে জাতীয় পার্টির কর্মসূচি নিয়ে ‘আমাদের কর্মসূচি নেই’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে অন্য কোনো সংগঠনের কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কাউকে কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়া, প্রতিহত করার ঘোষণা বা এ ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি আইনশৃঙ্খলা তথা জননিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে রংপুরে দুই ছাত্রনেতার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির অবাঞ্ছিত ঘোষণারও নিন্দা জানাই। গণতান্ত্রিক সমাজে যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করবে, প্রতিপক্ষের কর্মসূচিকে বাধা দেওয়া কিংবা অবাঞ্ছিত ঘোষণার অগণতান্ত্রিক মানসিকতা সবাইকে পরিহার করতে হবে।