শান্তি রক্ষার দায়িত্ব আওয়ামী লীগকে কে দিল

সম্পাদকীয়

যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটাই সত্যি হলো। বিরোধী দল বিএনপি ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা এসে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবেন। এই কর্মসূচির পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই দিন ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়।

ফলে ওই দিনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অন্তত ১৫টি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নাটোরে বিএনপির মঞ্চ দখল করে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে অনুমতি নেই—এ অজুহাত তুলে অনেক স্থানে পুলিশ পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ কারও অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তারা করেনি।

্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থানে হামলায় বিএনপির দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন, ৬৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাত কাম্য হতে পারে না। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, একই দিনে দুই দলের কর্মসূচি নেওয়া সমীচীন নয়। শান্তি সমাবেশের প্রবক্তা আওয়ামী লীগ ওই দিন কর্মসূচি না দিলে এ রকম পরিস্থিতি এড়ানো যেত। এর আগেও একাধিকবার বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে; যা কেবল অস্বাভাবিক নয়, অনাকাঙ্ক্ষিতও।

এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলটি শান্তি রক্ষার নামে পায়ে পাড়া দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করছে। আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, এটা পাল্টা কর্মসূচি নয়। তাহলে বিএনপির কর্মসূচির দিনই তারা কেন কর্মসূচি দিল? আওয়ামী লীগ যদি কোনো কর্মসূচি পালন করতে চায়, আগে ঘোষণা দিক। তখন আমরা বিএনপি বা অন্যান্য দলকেও বলতে পারব, তারা যেন একই দিন কর্মসূচি না রাখে। গণতন্ত্র মানলে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিও মানতে  হবে।

গণতন্ত্রে আওয়ামী লীগের জন্য এক নিয়ম এবং অন্য সব দলের জন্য অন্য নিয়ম হতে পারে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে প্রায়ই বলা হয়, তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। এটা কি সহাবস্থানের লক্ষণ? বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে প্রশাসনকেও বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা কী করবে।

আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী বিএনপি যদি কর্মসূচির নামে জনগণের শান্তি বিনষ্ট করে থাকে, সেটি মোকাবিলার দায়িত্ব কি দলের নেতা-কর্মীদের? তাহলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে কেন? শান্তি ও জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব।

আওয়ামী লীগ যেভাবে অন্য দলের কর্মসূচির দিন ‘পাহারা’ দিচ্ছে, সেভাবে অন্য দলও যদি তাদের কর্মসূচির দিন ‘পাহারা’ দিতে থাকে, তাহলে দেশে সংঘাত-সহিংসতা বাড়তে থাকবে। আওয়ামী লীগ যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হয় এবং সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করে, তাদের উচিত এসব পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পরিহার করে সেই পরিবেশ তৈরি করা।

তাদের মনে রাখতে হবে, বক্তৃতামঞ্চে মাঠ সমতল করার কথা শুধু মুখে বললেই হবে না, আচরণেও এটি প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিরোধী দল যেসব অভিযোগ করে আসছে, সেটাই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।