দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। ক্যাম্পাসে নানা সময়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনও গড়ে ওঠে। এমন আন্দোলনে অন্যান্য ক্যাম্পাসকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পথ দেখিয়েছে বলা যায়। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই এখনো যৌন নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে ওঠেনি। ক্যাম্পাসটিতে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক যৌন হেনস্তার ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন নিরাপত্তাহীনতা খুবই উদ্বেগজনক ও হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, গত এক মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চারটি ঘটনা ঘটেছে গত ১৭ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ১১ দিনের মধ্যে। তবে এসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। ২৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়া হল-সংলগ্ন সড়কে যৌন নিপীড়নের শিকার হন ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার কয়েক দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে তিনি লেখেন, এক বান্ধবীসহ তিনি হলে ফিরছিলেন। পথে এক ব্যক্তি তাঁকে যৌন নিপীড়ন করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ১৭ আগস্ট যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী একইভাবে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নিরাপত্তা শাখার কাছে অভিযোগ স্বীকার করলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার ঘটনা বেড়েছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরের মানুষের অবাধ প্রবেশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এক ঘটনায় ক্যাম্পাসের বাইরের একজন অভিযুক্তকে মারধর করে নিরাপত্তা শাখার কাছে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নবনিযুক্ত উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরিয়াল টিম নেই। এমন অবস্থায় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবার সহযোগিতা দরকার। ইতিহাস বিভাগের ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আমরা যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠিয়ে দেব।’
২০ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগরে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের সংস্কারসহ ছয় দাবিতে ছাত্রীরা মশালমিছিল করেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ এবং সেলের প্রয়োজনীয় সংস্কার; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে আসা অভিযোগের নিষ্পত্তি, প্রতিটি একাডেমিক ভবনে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার নিশ্চিত এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক গণশৌচাগার স্থাপন। এসব দাবি অত্যন্ত যুক্তি ও বাস্তবসম্মত। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব দাবি পূরণে সচেষ্ট থাকতে হবে ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে। এখন দেখার অপেক্ষা, নবনিযুক্ত উপাচার্য কী পদক্ষেপ নেন।