সেবা বাড়ান, পানির দাম নয়

সম্পাদকীয়

বছর বছর পানির দাম বাড়ানো একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০০৯ সাল থেকে পানির দাম বাড়ানোর এই ধারাবাহিকতা চলছে। শুধু করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে পানির দাম বাড়ায়নি তারা। তবে পরের বছর দুবার দাম বাড়িয়ে নিয়েছে। এভাবে পানির দাম বাড়ালেও সেবা বাড়ানোর কোনো নামগন্ধ নেই, গ্রাহকের ভোগান্তিরও শেষ নেই। এর মধ্যে আবারও পানির দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে সংস্থাটি। এ নিয়ে গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় আবাসিকে পানির দাম ৩০ শতাংশ ও অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট একটি কমিটি। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সেখানে ওয়াসা আবারও পানির দাম বাড়ালে নগরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।

দাম বাড়ানোর সুপারিশের পেছনে যুক্তি হচ্ছে, পানির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া পানি সরবরাহে ঋণের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হচ্ছে। উল্লেখ্য, পানির পরিশোধনে ব্যবহৃত রাসায়নিক, বিদ্যুৎ বিল, জনবলের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয় উৎপাদন খরচের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদিও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন–ভাতার বাইরে প্রণোদনা দিতে মরিয়া সংস্থাটি।

চট্টগ্রাম নগরের ৪০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার পানির জন্য হাহাকার রয়েছে। কোথাও সংযোগ থাকলেও পানি নেই। আর কোথাও সংযোগই নেই। তার ওপরে পানিতে লবণাক্ততার কারণে অনেক এলাকার গ্রাহক চরম ভোগান্তির মধ্যে আছেন। এর জন্য ওয়াসা কোনো সমাধানের পথেও হাঁটছে না। এমন সংকটের মধ্যে পানির দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিই হতে পারে না।

পানির প্রবল চাহিদা থাকলেও দুঃখজনক হচ্ছে ওয়াসার পানি সরবরাহের পাইপের ফুটোর কারণে প্রতিবছর অন্তত ৯১২ কোটি লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হওয়া পানির বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। আবার এই ফুটো সারাতে বছরে গড়ে খরচ হয় এক কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ আছে, নষ্ট হওয়ার নামে এখান থেকে কিছু পানি বিক্রি হয়। আবার ফুটো মেরামতের নামেও বাড়তি বিল করা যায়। এতে কিছু টাকা কর্তাব্যক্তিদের পকেটে চলে যায়। পানির এ অপচয়ের কারণে গ্রাহক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ পরিমাণ পানি বাঁচানো গেলেও পানির দাম বাড়াতে হয় না।

তার মানে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশ কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। নগরবাসী কোনোভাবেই পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে নয়। সরকারের কাছ থেকেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার কথা। আমরা আশা করব, সরকার গ্রাহক স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবে। চট্টগ্রাম ওয়াসা তাদের অযাচিত ব্যয় কমাবে এবং অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধ করে পানির অপচয় ঠেকাবে, এটিই কাম্য। পানির দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি করা কার্যকর কোনো সমাধান হতে পারে না।