বাজারে গত সপ্তাহেও চালের দাম বাড়তির দিকে ছিল। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক বলা যায় না। চালের পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দামও। কিছুটা স্বস্তি আছে সবজির বাজারে। বন্যার ধকল কেটে যাওয়ার পর সবজির দাম কমতে শুরু করেছে।
চালের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গ্রামাঞ্চলে এই শ্রেণির মানুষকে খুব একটা সবজি কিনে খেতে হয় না। বাড়ির আঙিনায় লাগানো সবজি দিয়েই তাঁরা চাহিদা মেটান। অর্থাৎ তাঁদের আয়ের সিংহভাগই ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের দাম কমলে যেমন তাঁরা কিছুটা স্বস্তি পান, দাম বাড়লে অস্বস্তিতে পড়তে হয়।
চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকারকে বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার সেই পদক্ষেপ কতটা নিয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠবেই। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম যে পদক্ষেপটি নিতে হয়, সেটি হলো চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত বিকল্প ব্যবস্থায় সীমিত আয়ের মানুষের কাছে অপেক্ষাকৃত কম দামে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা।
প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশেই রেশনিং ব্যবস্থা আছে, যেখানে সরকার বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করে থাকে। বাংলাদেশেও একদা রেশনিং প্রথা চালু ছিল। আবার এর বিলিবণ্টনে অনেক অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগও কম ছিল না। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় গরিব মানুষের কাছে চালসহ যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছায়, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বাজার সিন্ডিকেটের দোহাই দেওয়া হতো। ক্ষমতার পালাবদলের পর অনেক কিছু বদল হলেও বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাব এতটুকু কমেছে, এর প্রমাণ নেই। পরিবহনে চাঁদাবাজিও কমেনি, যদিও চাঁদাবাজদের চেহারা বদল হয়েছে। পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে থাকেন। তাঁদের এই অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য বলার সুযোগ নেই। দিনাজপুর থেকে কোনো পণ্য ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিতে যদি ঘাটে ঘাটে মালিককে চাঁদা দিতে হয়, তিনি দাম বাড়িয়েই সেটি পুষিয়ে নেবেন।
অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় বড় সংস্কারের আওয়াজ উঠেছে। এসব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম সীমিত আয়ের মানুষের নাগালে না রাখতে পারলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে বলে মনে হয় না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাজার নিয়ন্ত্রণে চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ সরকার নেয়নি। বাজার ব্যবস্থাপনা চলছে আগের মতোই। ট্রাকে করে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায় কদাচিৎ। এ অবস্থায় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা প্রায় অসম্ভব।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম কমে আসবে। কিন্তু গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে সেই কয়েক মাস অপেক্ষা করা সম্ভব কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চাল, ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যগুলো যাতে তাঁরা সাশ্রয়ী দামে কিনতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্বালানির দাম কিছুটা কমায় কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন খরচ কমবে আশা করা যায়। বিচ্ছিন্ন ও লোকদেখানো কর্মসূচি নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে নিতে হবে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ।