দেশের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে অনুসারে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পায়নি। বরং অনেক জায়গায় সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। সরকার নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা কেন কমছে না, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সমালোচনার শেষ নেই।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসার জন্য দেশের অনেক জায়গায় ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও সেগুলো চালু করা হচ্ছে না।
যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায়। সেখানে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে প্রায় আট বছর আগে একটি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় এখনো সেটিতে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। একটি প্রশাসনিক অনুমোদন কি এতই দুর্মূল্য যে সেটি পেতে এত বছর লেগে যাচ্ছে?
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। ওই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মহাসড়কের পাশেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে সেটি নির্মাণ করা হয়। পৌনে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলাবিশিষ্ট ভবন তৈরি করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
যার নিচতলা শুধু ট্রমা সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ২০১৫ সালে ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তরও করা হয়। কিন্তু ট্রমা সেন্টার তৈরি করেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব শেষ করেছে। ট্রমা সেন্টারে বিশেষজ্ঞ (কনসালট্যান্ট) চিকিৎসক, অর্থোপেডিকস সার্জন, অবেদনবিদ (অ্যানেসথেটিস্ট), আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ান থাকার কথা রয়েছে। এমনকি সেন্টারে চিকিৎসার কোনো সরঞ্জামও দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রায় আট বছরেও এসবে জনবল নিয়োগ দেওয়া যায়নি, সরবরাহ করা যায়নি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বক্তব্য, ট্রমা সেন্টারটির প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হলেও এখনো অনুমোদন হয়নি। ট্রমা সেন্টারটিতে কতটি শয্যা রয়েছে, জনবল কত লাগবে এবং যন্ত্রপাতি কী কী লাগবে, এসব বিষয়ে তথ্য চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাঠানো হয়েছে।
মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করার উদ্দেশ্য ছিল দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত আহত ব্যক্তিদের সেখানে নিয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসা দেওয়া, যাতে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়।
এখন ট্রমা সেন্টার নির্মাণ হলো ঠিকই, কিন্তু তা কোনো কাজে এল না, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আর কতবার লিখিত আবেদন জানানোর পর ট্রমা সেন্টারটি প্রশাসনিক অনুমোদন পাবে? কবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবেন?