দ্রুত পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হোক

সম্পাদকীয়

সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়গুলো খুলে গেছে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো শ্রেণি কার্যক্রম বা পাঠদান পুরোপুরি চালু হয়নি। অনেক শিক্ষক ঠিকই স্কুলে আসছেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। নতুন সরকার গঠন হয়েছে, সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন উচিত হবে স্কুলগুলোতেও দ্রুত শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করে দেওয়া।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একপর্যায়ে সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে মোড় নিলে ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রথমে ৪ আগস্ট থেকে ১২টি সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী পৌরসভা বাদে বাকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও সেটি বন্ধ করা হয়।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির মুখে পরদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এক দিন পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণ ফিরে পায়নি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখনো শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করছেন। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর সড়ক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তা অসামান্য। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? দ্রুত ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমরা সম্পাদকীয় প্রকাশ করি। অবশেষে অনেক জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, পাশাপাশি আছেন শিক্ষার্থীরাও। সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে অনেকে স্কুলপড়ুয়া।

স্কুলে পাঠদান শুরুর জন্য এখন শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে বাইরে আছে। পড়াশোনায় এমন ছেদ শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবারও প্রাণ ফিরে পাক, সেটিই কাম্য।

শুধু স্কুল শিক্ষা নয়, উচ্চমাধ্যমিকেও শ্রেণি কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। স্থগিত হয়ে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে পারে কি না, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তার মানে আরও প্রায় এক মাস সময় লাগবে। পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে এই সময় আরও কমিয়ে আনা যায় কি না, সেটি আশা করি ভেবে দেখবে সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। ক্যাম্পাসগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়েও আমরা বারবার সম্পাদকীয় লিখেছি। কিন্তু পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। এখন ক্যাম্পাসগুলো খুলে দেওয়ার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি। ইতিমধ্যে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। এসব পদে যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়েও দ্রুত ভাবতে হবে সরকারকে। উচ্চশিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর এটি একটি বড় সুযোগ মনে করা যেতে পারে।

স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।