পোশাককর্মীদের নিরাপত্তা দেবে কে

সম্পাদকীয়

‘চলন্ত বাসে ধর্ষণ’ কথাটি গুগল অনুসন্ধান যন্ত্রে লিখে ‘এন্টার’ বোতাম চাপলে এ–সংক্রান্ত যত খবরের লিংক কম্পিউটার পর্দায় ভেসে ওঠে, তার সংখ্যাকে উদ্বেগজনক বললে যথার্থ হয় না; তা এককথায় আতঙ্ক–জাগানিয়া। চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর বাস থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া এবং তাতে ঘটনার শিকার হওয়া নারীর মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়।

এসব ঘটনার পৌনঃপুনিকতায় ‘চলন্ত বাসে ধর্ষণ’কে রীতিমতো প্রপঞ্চ এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতাকে (প্রকারান্তরে নিষ্ক্রিয়তা) সেই প্রপঞ্চের অন্যতম অনুঘটক বলে প্রতীয়মান হয়।

গত কয়েক বছরের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব ঘটনায় ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়ে ও নারীদের একটি বড় সংখ্যা হলো পোশাকশ্রমিক। আর ধর্ষকের ভূমিকায় বারবার দেখা যায় বাসের চালক ও চালকের সহকারীদের। আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো ঘটনাগুলো, ঘুরেফিরে কয়েকটি নির্দিষ্ট রুটেই ঘটছে।

এই প্রপঞ্চের সর্বশেষ বিয়োগান্ত চরিত্র কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের তিন সন্তানের একজন জননী। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকায় থাকতেন। তিনি শ্রীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

গত শুক্রবার কাজ শেষে তিনি যাত্রীবাহী বাসে চড়ে ভালুকা ফিরছিলেন। পথে একে একে সব যাত্রী বিভিন্ন স্থানে নেমে গেলে চালক ও চালকের দুই সহকারী তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বাধা দেওয়ায় তাঁরা চলন্ত বাস থেকে ওই নারীকে ফেলে দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর রোববার তিনি মারা যান। আপাত স্বস্তির কথা, এ ঘটনায় বাসের চালক ও চালকের দুই সহকারীকে আটক করা হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে শ্রীপুরে চলন্ত বাস থেকে স্বামীকে ফেলে দিয়ে এক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার আগে টাঙ্গাইলে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মী গণধর্ষণের শিকার হন। এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বহু। চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে কিংবা ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার এই সব ঘটনা রোধে শিল্প পুলিশ কিংবা হাইওয়ে পুলিশ কিংবা সাধারণ পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা যেকোনো বিবেচনায় প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশেষ করে সাভার ও গাজীপুর-শ্রীপুর এলাকায় বিপুলসংখ্যক নারী পোশাককর্মী কাজ করেন। কর্মসূত্রে তাঁদের অনেককে রাতে বাসে করে বাসায় ফিরতে হয়।

তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষেরও দায় আছে। কর্মীর নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি চালক ও চালকের সহকারীদের চিত্তশুদ্ধি নিশ্চিত করায় বিশেষ প্রচারণা জরুরি।