গত বছর জানুয়ারি মাসে তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তরে বলেছিলেন, দেশের ইটভাটার ৬০ শতাংশই অবৈধ এবং এসব ইটভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এক বছর পরেও এই চিত্রে খুব একটা পরিবর্তন এসেছে বলে প্রতীয়মান হয় না, যখন আমরা দেখি একটি জেলার সব ইটভাটাই অবৈধ। পাহাড় ও প্রকৃতিসমৃদ্ধ জেলা রাঙামাটি হওয়ায় তাতে আরও বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাঙামাটি জেলায় মোট ২৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কাউখালী উপজেলায় ১৬টি, লংগদু উপজেলায় ৬টি, বাঘাইছড়িতে ৩টি, রাজস্থলীতে ৩টি এবং কাপ্তাই উপজেলায় একটি ইটভাটা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তালিকায় আছে ২৫টি।
ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আবশ্যকীয়। সেই ছাড়পত্রের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় প্রশাসন ইটভাটা নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে থাকে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটিতে কোনো ইটভাটারই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। ফলে সব কটিই অবৈধ।
প্রশ্ন হচ্ছে, একটি জেলার সব ইটভাটা কীভাবে অবৈধভাবে চলতে পারে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাবে এ দেশে সবকিছুই আসলে সম্ভব। সমতলের অন্যান্য জেলার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামে ইটভাটার অনুমোদনের সুযোগ নেই। ২০১৩ সালে ইটভাটা–সংক্রান্ত আইন পাসের পর কোনো ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়নি রাঙামাটিতে।
দেখা যাচ্ছে, জেলার ২৯টি ইটভাটার ১৭টিই পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে। মাটিও সংগ্রহ করা হচ্ছে আশপাশের পাহাড় কেটে। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত ও গ্রামীণ বনের অপরিপক্ব গাছ। বিভিন্ন ফলদ বাগান থেকেও গাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রশাসন ও পরিবেশবাদীদের কোনো আপত্তিই মানছেন না ভাটামালিকেরা। ইটভাটা নির্মাণের জন্য স্থানীয় লোকদেরও সংযুক্ত করে ফেলেছেন তাঁরা। এ ছাড়া পাহাড় কাটা ও বনের গাছ কাটার বিষয়টি তাঁরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন।
এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থাও নিচ্ছে। অভিযান চালিয়ে ইটভাটার চুল্লি ভেঙে দেওয়া এবং জরিমানা করা হচ্ছে। এরপরও অবৈধ ইটভাটাগুলো থেমে নেই। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন বলছে, পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকা ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছেন।
আমরা আশা করব, এ নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর হবে। আমরা রাঙামাটির প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে এমন কোনো ইটভাটা চাই না। ইটভাটার মালিকেরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।