বন বিভাগের দায়িত্বে অবহেলা স্পষ্ট

বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ঘটনা দেশে নতুন নয়। সুন্দরবনের খাল থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছড়া পর্যন্ত এই অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি। স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কঠোর হলে এটি বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু সেটিই হচ্ছে না। সিলেটের জলা বনখ্যাত রাতারগুলেও এমন পরিবেশবিধ্বংসী কাণ্ড ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। দুঃখজনক হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে সেখানকার বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কোনো হেলদোল নেই। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সোমবার রাতে রাতারগুলের কৈয়ার খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ঘটনা ঘটেছে। মাছ শিকারের জন্য বনের পুন্যাছড়ার পানির বাঁধ কেটে কাপনা নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছড়ার পানি শুকিয়ে ছড়ার মধ্যবর্তী অংশে জাল পেতে মাছ শিকার করা হয়েছে। অন্যদিকে কৈয়ার খালে রাতে বিষ ঢেলে মাছ ধরে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। সকালে স্থানীয় ব্যক্তিরা কৈয়ার খালের পূর্ব অংশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে থাকতে দেখেন। পরে বন কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি কর্মশালা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বন বিভাগের উদ্যোগে বন ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে গঠিত সিএমসি কমিটির সভাপতি মাহবুব আলমও কর্মশালায় ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।

শুধু তা–ই নয়, অবৈধভাবে মাছ শিকারের পেছনে বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং রাতারগুল বন ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) কিছু সদস্যের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং এ মাছের ভাগ তাঁরাও পান বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া বনের অভ্যন্তর থেকেও গাছ কাটার ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। মাছ ধরার বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার দাবি, এ ঘটনা সংরক্ষিত বনের বাইরে ঘটেছে। অথচ বনের বাইরের জায়গাটি বন বিভাগই দখলমুক্ত করেছিল। সেটি যদি বনের বাইরেরই হয়, তাহলে তা কেন বন বিভাগ দখলমুক্ত করতে যাবে। ফলে বনের বাইরের জায়গা বলে সেখান থেকে মাছ ধরার বিষয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হলো না?

স্থানীয় পরিবেশ সংগঠকদের অভিযোগ, রাতারগুল বনকে কিছু সুবিধাবাদী চক্র বন বিভাগের সহায়তায় ভাগবণ্টন করে লুটপাটের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর পরপর সংরক্ষিত বনের পানিতে বিষ ঢেলে মাছ শিকারের ঘটনা ঘটছে। এতে শুধু মাছ নয়, বনের পুরো জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর দায় বন বিভাগের এড়ানোর সুযোগ নেই।

এখন বন বিভাগকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা রাতারগুলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে চায় কি চায় না; নাকি তাদের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় এই বনভূমি দুর্বৃত্তদের ধ্বংস করার সুযোগ দিয়ে যাবে? স্থানীয় প্রশাসনই–বা এখানে কী করছে? আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।