এমন আমলাতান্ত্রিকতার অবসান হোক

সম্পাদকীয়

গত বছর কয়েক দফা বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আমনের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় না হওয়ায় এ বছর এমনিতেই ভরা মৌসুমে চালের বাজার বেশ চড়া। আমদানি শুল্ক তুলে দিয়ে চাল আমদানিকে উৎসাহিত করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বিপুল জনগোষ্ঠী এবং অধিকাংশ মানুষের মোট খাদ্যশক্তির ৬৫ শতাংশ ভাত থেকে আসার কারণে ১–২ শতাংশের ঘাটতি হলেও সেটা বাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যথেষ্ট। সে কারণে বিশ্বে গত কয়েক বছরের মধ্যে চালের দাম সর্বনিম্ন হলেও বাংলাদেশের বাজারে দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

এ বাস্তবতায় আসন্ন বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এটা সরাসরি খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা এই গুরুত্বকে কতটা আমলে নিচ্ছেন, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কেননা, বোরো উৎপাদনের ভূমি হিসেবে পরিচিত হাওরের ফসল নির্মাণ বাঁধ তৈরিতে যে গড়িমসি দেখা যাচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার নির্ধারিত সময়ের এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ৭টি হাওরের ৮৬টি ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) সদস্যরা এখনো প্রথম কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না। ফলে বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এ অবস্থায় হাওরের বোরো ধান রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। 

কৃষকদের এই শঙ্কা খুবই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। কেননা, প্রায় প্রতিবছরই ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে কৃষকের প্রায় পেকে ওঠা ধান বিনষ্ট হয়। এর মূল কারণ হলো বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় সেগুলো টেকসই হয় না। ফলে পানির চাপ সেটি ঠেকাতে পারে না।  

চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও মেরামতকাজের উদ্বোধন করা হয় ১৫ ডিসেম্বর। এক মাস পেরিয়ে গেলেও পিআইসিগুলো কেন প্রথম কিস্তির টাকা পায়নি? এর কারণ হলো ধর্মপাশায় এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। নতুন একজন আসার আগপর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না? জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘ধর্মপাশায় নতুন ইউএনও দেওয়া হয়েছে। দুই–তিন দিনের মধ্যে পিআইসিরা প্রথম কিস্তির টাকার চেক পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি।’

এর চেয়ে বড় আমলাতান্ত্রিকতা আর কী আছে? ব্যাংকে টাকা আসার পরও পিআইসিগুলো টাকা পায়নি। ফলে সময়মতো তাঁরা বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের কাজটাও শুরু করতে পারেননি। এই দেরির কারণে বাঁধ যদি টেকসই না হয় এবং সেগুলো যদি পানির চাপ সহ্য করতে না পারে এবং বাঁধ ভেঙে যদি বোরোর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার দায় কে নেবে? এমন আমলাতান্ত্রিক চর্চার অবসান হওয়া জরুরি।