ইসির বিলম্বিত প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয়

সম্পাদকীয়

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল, যার ভিত্তিতে তারা নির্বাচনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ইসি যে দায়িত্ব শেষ করতে পারেনি, তার প্রমাণ নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কাজ শেষ না হওয়া।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরের জুনের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করার কথা বলেছিল ইসি। তাদের কর্মপরিকল্পনা ছিল মে মাসে নতুন নিবন্ধনের জন্য পাওয়া আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়া এবং জুন মাসে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা। কিন্তু জুন মাসের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী দলগুলোর মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজই শেষ করতে পারেনি ইসি।

গত বছরের অক্টোবরে নতুন নিবন্ধনের জন্য মোট ৯৩টি দল ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকেছে ১২টি দল। এই দলগুলো হলো এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।

এর মধ্যে এবি পার্টি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতাদের নিয়ে গঠিত বলে আলোচনা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জামায়াতের সাবেক নেতা-কর্মীদের দল নিবন্ধন পেয়ে গেলে দলের (জামায়াত) অনেক নেতা নতুন দলের নামে নির্বাচন করতে পারেন। বর্তমানে ইসিতে জামায়াতে ইসলামীকে ১০ বছর পর ঢাকায় প্রকাশ্য সমাবেশ করার অনুমতি নিয়েও যদি রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন আছে।

জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) আদেশ অনুযায়ী, কোনো দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হলে তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। আরপিও এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় ও ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে।

প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। অনেক রাজনৈতিক দল এসব শর্তকে বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করে। আবার কোনো কোনো দল আগের নির্বাচন কমিশনের আমলে সব শর্ত পালন করার পরও নিবন্ধন না পাওয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) নিবন্ধন পেয়েছে।

বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত দল ৪২টি। এই নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে এমন দলও আছে, যারা প্রায় নিষ্ক্রিয়। আবার অনিবন্ধিত বেশ কিছু দল আছে, যাদের জনভিত্তি আছে এবং সাংগঠনিকভাবেও সক্রিয়। ইসির উচিত যত দ্রুত সম্ভব নতুন দলের নিবন্ধনের কাজটি শেষ করা।

এ কাজে যত বিলম্ব হবে, তত ইসির ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।